ধর্ম ডেস্ক | কুরবানি একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। শুধু ইবাদতই নয় বরং আল্লাহর ভালোবাসার অনন্য নজির স্থাপনের অন্যতম আমল। যে কোনো ইবাদত ও আমলের জন্য ২টি জিনিস খুবই জরুরি। যা না হলে কোনো ইবাদতই কবুল হবে না। কুরবানির ক্ষেত্রে তা প্রযোজ্য। কী সেই ২টি বিষয়; যা না হলে কুরবানি হবে না?
কুরআন-সুন্নায় এ কথাটি প্রমাণিত যে, কোনো আমলই নেক, সালেহ বা ভালো হয় না; কিংবা আল্লাহর কাছে কবুল বা নৈকট্যদানকারীও হয় না; যতক্ষণ না তাতে দু’টি শর্ত পূরণ হয়। তাহলো-
১. ইখলাস
কুরবানি হতে হবে শুধু আল্লাহর জন্য। লোক দেখানোর জন্য, গোশত খাওয়ার জন্য। সুনাম-সুখ্যাতির জন্য যত বড়, সুন্দর ও দামি পশুই জবাই করা হোক না কেন, তাতে ইখলাস না থাকলে এ কুরবানি আল্লাহর কাছে কবুল হবে না। অর্থাৎ কুরবানি হতে হবে খাঁটিভাবে আল্লাহরই উদ্দেশ্যে। তা না হলে এ কুরবানি আল্লাহর দরবারে কবুল হবে না। যার প্রমাণ হলো- হাবিল এবং কাবিলের কুরবানি। আল্লাহ তাআলা কুরবানি কবুল হবে কার তা এভাবে উল্লেখ করেছেন-
إِنَّمَا يَتَقَبَّلُ اللهُ مِنَ الْمُتَّقِينَ
অর্থ : নিশ্চয়ই আল্লাহ তো মুত্তাকি (পরহেজগার ও সংযমীদের) কুরবানিই কবুল করে থাকেন।ক' (সুরা মায়েদা : আয়াত ২৭)
অন্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা কুরবানি কবুল হওয়ার বিষয়টি আরও সুস্পষ্ট করেছেন এভাবে-
لَن يَنَالَ اللهَ لُحُومُهَا وَلَا دِمَاؤُهَا وَلَكِن يَنَالُهُ التَّقْوَى مِنكُمْ كَذَلِكَ سَخَّرَهَا لَكُمْ لِتُكَبِّرُوا اللهَ عَلَى مَا هَدَاكُمْ وَبَشِّرِ الْمُحْسِنِينَ
অর্থ : 'আল্লাহর কাছে কখনোও ওগোলোর (কুরবানির পশুর) গোশত পৌঁছে না এবং রক্তও না; বরং তাঁর কাছে পৌঁছে তোমাদের (মানুষের অন্তরের) তাকওয়া (সংযমশীলতা); এভাবে তিনি ওগুলোকে (কুরবানির পশুগুলোকে) তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন যাতে তোমরা আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা কর। এই জন্য যে, তিনি তোমাদেরকে পথ প্রদর্শন করেছেন। আর তুমি সুসংবাদ দাও সৎকর্মশীলদেরকে।' (সুরা হজ : আয়াত ৩৭)
২. আল্লাহ ও তার রাসুলের বিধি-বিধান অনুসরণ করা
আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের বিধি-বিধান অনুসরণ করা ছাড়া কোনোভাবেই কুরবানিসহ কোনো ইবাদত, আমলই কবুল হবে না। বিষয়টি আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারিমে এভাবে তুলে ধরেছেন-
فَمَنْ كَانَ يَرْجُوا لِقَاءَ رَبِّهِ فَلْيَعْمَلْ عَمَلاً صَالِحاً وَّلاَ يُشْرِكْ بِعِبَادَةِ رَبِّهِ أَحَدا
অর্থ : যে তার প্রতিপালকের সাক্ষাৎ কামনা করে; সে যেন সৎকর্ম করে এবং তার প্রতিপালকের ইবাদতে কাউকে শরিক না করে।' (সুরা কাহফ : আয়াত ১০)
সুতরাং যারা কুরবানি করবেন, তাদের কুরবানি কবুল হওয়ার জন্য এ দুইটি বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রাখার গুরুত্ব অপরিসীম। যারা শুধু বছরজুড়ে এ পশু জবাইয়ের গোশত খাওয়ার উদ্দেশ্যে কুরবানি দেয়; তাদের কুরবানিও গ্রহণযোগ্য হবে না।
পাশাপাশি সমাজে সুনাম বৃদ্ধি কিংবা আত্ম-মর্যাদা রক্ষার উদ্দেশ্যে মোটা-তাজা ও সুন্দর গুরু কিনে দিয়ে কুরবানি দিলেও তা কবুল হবে না। যারা এমনটি করবে, তাদের পশু জবাই যে, ইবাদত ও কুরবানির আমল নয়; এটি সুস্পষ্ট।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে কুরবানির জন্য একনিষ্ঠ নিয়ত ও কুরআন-সুন্নাহর বিধি-বিধান মেনে তাঁরই সন্তুষ্টি ও ভালোবাসা অর্জনের তাওফিক দান করুন। হাদিসের আমল নিজেদের জীবনে বাস্তবায়ন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।