আদিতমারী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ফারুক ইমরুল কায়েসের বিরুদ্ধে ৯ দফা অভিযোগ তুলে অনাস্থা প্রস্তাব করেছেন উপজেলার সব ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা। মঙ্গলবার (১৭ নভেম্বর) সন্ধ্যায় জেলা প্রশাসকের কাছে অনাস্থার প্রস্তাবটি জমা দেন ইউপি চেয়ারম্যানরা।
এর আগে রোববার (১৫ নভেম্বর) বিকেলে হত্যার হুমকির অভিযোগে আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহাম্মদ মনসুর উদ্দিন ও ১৯টি স্বাক্ষরিত চেক ছিঁড়ে ফেলায় উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের স্টানোটাইপিস্ট হাবিবুর রহমান বাদী হয়ে ওই উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে পৃথক দুইটি জিডি করেন। উপজেলার ৮টি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানদের অভিযোগে জানা গেছে, আদিতমারী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফারুক ইমরুর কায়েস নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে উপজেলা পরিষদের বিভিন্ন সময় ইউপি চেয়ারম্যানসহ সব কর্মকর্তাদের সঙ্গে খারাপ আচরণ, অশ্রাব্য ভাষায় গালমন্দ ও দুর্নীতি করে আসছেন।
এ কারণে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ৯ দফা অভিযোগ তুলে অনাস্থা প্রস্তাব করেন ইউপি চেয়ারম্যানরা।
অভিযোগুলো হলো- বার্ষিক উন্নয়ন তহবিল (এডিপি) উন্নয়নমূলক কাজের প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জোর করে সিংহভাগ নিজের নামে নেন এবং খেয়াল খুশিমত ব্যয় করেন। ওই প্রকল্পের কাজ শেষ না হতেই জোরপূর্বক বিল উত্তোলন করেন। সভা চলাকালীন সদস্যদের অশালীন ও অশ্রাব্য ভাষায় গালমন্দ করেন।
গত বছর মাতৃত্ব ভাতার ৪০টির মধ্যে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান একই সবগুলো বন্টন করেন। বিধি অনুসরণের কথা বলায় মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তাকে অশ্রাব্য ভাষায় গালমন্দ করেন। সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর ভাতাভোগীদের তালিকা প্রণয়নে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নিজেই সিংহভাগ দাবি করেন। যা বিধিবর্হিভূত বলে কর্মকর্তারা জানালে তাদের ও ইউপি চেয়ারম্যানদের ওপর ক্ষেপে গিয়ে অশালীন আচরন করেন এবং সদস্যদের হুমকি দেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান।
এ ছাড়াও উপজেলা পরিষদের সভায় নিয়মিত উপস্থিত থাকেন না উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান। এরপরও তিনি টিআর খাবিখা প্রকল্পের একক সিদ্ধান্তে ২৫ শতাংশ একাই ইচ্ছেমত বাস্তবায়ন দেখিয়েছেন। প্রায় সব সরকারি কর্মসূচিতে অনুপস্থিত থেকে মোবাইল বন্ধ রাখেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান। ফলে সরকারি কাজ চরম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে নিজের অংশ দাবি করেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান। বিধিসম্মত না হওয়ায় দিতে অপরাগতা প্রকাশ করলে মোবাইলে ইউপি চেয়ারম্যানদের অশ্রাব্য ভাষায় গালমন্দ ও হুমকি দেন। নিজের ভাগ না পেয়ে হাট-বাজার উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থ ছাড় দেননি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ফারুক ইমরুল কায়েস। ফলশ্রুতিতে উপজেলার উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। তাই উপজেলার উন্নয়নের স্বার্থে ৮ জন ইউপি চেয়ারম্যান উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ফারুক ইমরুল কায়েসের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব জ্ঞাপন করেন।
ইউপি চেয়ারম্যানদের অনাস্থার প্রস্তাবটির অনুলিপি স্থানীয় সংসদ সদস্য সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন দফতরে পাঠানো হয়েছে।
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক আবু জাফর বলেন, আদিতমারী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে সব ইউপি চেয়ারম্যানদের অনাস্থার প্রস্তাবটি পেয়েছি। উপজেলা পরিষদ বিধি অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এর আগে বৃহস্পতিবার (১২ নভেম্বর) মাসিক সমন্বয় সভায় ভিজিডি ও মাতৃত্ব ভাতার তালিকায় নিজের অংশ দাবি করেন উপজেলা চেয়ারম্যান। যা বিধিসম্মত না হওয়ায় ইউএনও নাকোচ করে দেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে সভা অসমাপ্ত রেখে চলে যান চেয়ারম্যান। এ সময় চেয়ারম্যান ইউএনওকে বলেন, বেশি কথা বললে পিটিয়ে নরসিংদী পাঠিয়ে দিবো। উপজেলা পরিষদ কি তোর বাবার সম্পত্তি, উপজেলা পরিষদ কি তুই চালাবি?’। এভাবে গালমন্দ করে হত্যার হুমকি দেন।
এ ঘটনায় ওই দিন রাতে ১৭ জন অফিসার ও ইউএনও মুহাম্মদ মনসুর উদ্দিন জেলা প্রশাসক বরাবরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
এসব ঘটনায় নিজের ও পরিবারের নিরাপত্তা চেয়ে রোববার (১৫ নভেম্বর) বিকেলে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানকে অভিযুক্ত করে আদিতমারী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি ৫৫৮) করেন ইউএনও মুহাম্মদ মনসুর উদ্দিন।
একই দিন উপজেলার উন্নয়ন তহবিলের ইউএনওসহ যৌথ স্বাক্ষরিত ১৯টি চেকের পাতা ছিঁড়ে ফেলেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান। এ ঘটনায় উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের স্টানোটাইপিস্ট হাবিবুর রহমান বাদী হয়ে রোববার (১৫ নভেম্বর) আদিতমারী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি ৫৫৯) করেন।
এসব ঘটনায় নিজেকে নির্দোষ দাবি করে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ফারুক ইমরুল কায়েস সংবাদ সম্মেলন করেন এবং সোমবার (১৬ নভেম্বর) রাতে ইউএনওর বিরুদ্ধে আদিতমারী থানায় একটি জিডি (নং ৬১২) করেন।