ঢাকাবৃহস্পতিবার , ১ জুলাই ২০২১
  1. Covid-19
  2. অপরাধ ও আদালত
  3. অর্থনীতি
  4. আন্তর্জাতিক
  5. ইসলাম ডেস্ক
  6. কৃষি ও অর্থনীতি
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয়
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. দেশজুড়ে
  11. নির্বাচন
  12. বানিজ্য
  13. বিনোদন
  14. ভিডিও গ্যালারী
  15. মুক্ত মতামত ও বিবিধ কথা
আজকের সর্বশেষ সবখবর

ঈশ্বরদীর নতুনহাট গোলচত্বরে সরকারি জমি দখল করে অট্টালিকা

প্রতিবেদক
প্রতিদিনের বাংলাদেশ
জুলাই ১, ২০২১ ১:১২ অপরাহ্ণ
Link Copied!

ইয়াছিন আলী শেখ, পাবনা জেলা প্রতিনিধিঃ

ঈশ্বরদীতে সরকারি জমির বেশ কিছু অংশ দখল করে সুবিশাল অট্টালিকা (পাঁচতলা) নির্মাণ করেছেন স্থানীয় প্রভাবশালী ও ধনাঢ্য ব্যবসায়ী মো. আনোয়ার হোসেন ফকির। শুধু ভবনের অংশবিশেষ নয়, তিনি জোর খাটিয়ে সরকারি জমিতে নির্মাণ করেছেন ভবনটির জন্য বিশাল আকৃতির দুটি সেপটিক ট্যাংক। আনোয়ার ফকিরের দখলবাজির এখানেই শেষ নয়, তিনি নিজের ভবনের সামনে মহাসড়কসংলগ্ন সুবিশাল জায়গায় ইট বিছিয়ে গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করেছেন। বন বিভাগের অনুমতি না নিয়েই নিজের সুবিধার জন্য কেটে ফেলেছেন একটি বিশাল বটগাছ।

 

সবশেষ তিনি প্রায় ৫০ বছরের পুরনো একটি রাস্তা বন্ধ করে নিজের আয়ত্তে নিয়ে সেটি নিজের মতো করে ব্যবহার শুরু করেছেন। এতে যাতায়াতের একমাত্র পথটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছে প্রায় ১৫০ পরিবার। গত বৃহস্পতিবার সরেজমিনে ঈশ্বরদীর সাহাপুর ইউনিয়নের নতুনহাট গোলচত্বরে গিয়ে এসব চিত্র দেখা যায়।

আনোয়ার ফকিরের দখলবাজির শিকার ভুক্তভোগী এলাকাবাসী ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছে। দুই শতাধিক এলাকাবাসী জোট বেঁধে তাদের স্বাক্ষরসংবলিত অভিযোগপত্র ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ (ইউএনও) সরকারি সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে জমা দিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন ইউএনও পি এম ইমরুল কায়েস।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, প্রভাবশালী আনোয়ার ফকির প্রথম জীবনে বিএনপির রাজনীতি করতেন। বিএনপি রাষ্ট্রক্ষমতায় এলে তিনি নিজ বাড়িসংলগ্ন বিন্দাবন দাসের বংশধরদের উচ্ছেদ করে, তাদের জমি দখলে নেন। আনোয়ার ফকিরের সন্ত্রাসী বাহিনীর নির্যাতন ও মামলায় জর্জরিত হয়ে নিজের জন্মস্থান নতুনহাট গোলচত্বর থেকে রাতের আঁধারে সাংবাদিক অধীর কুমার মণ্ডলসহ বেশ কয়েকজন পরিবার-পরিজন নিয়ে কলকাতায় পালিয়ে যান।

পরে তাদের অন্য শরিকরা ভয়ে সেই জমি নামকাওয়াস্তে আনোয়ার ফকিরকে দলিল করে দিয়েছেন বলে এলাকায় প্রচার রয়েছে। এসব বিষয়ে আদালতে মামলা চলমান রয়েছে বলে জানা গেছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, নতুনহাট গোলচত্বরের পূর্বপাশ্বের মহাসড়কের সীমানা খুঁটির মধ্যেই সুবিশাল ভবন নির্মাণ করেছেন আনোয়ার হোসেন। আর মহাসড়ক লাগোয়া জমিতে তৈরি করেছেন ভবনটির জন্য দুটি সেপটিক ট্যাংক। আর নিজের সুবিধার জন্য নবনির্মিত ভবনের সামনে দিয়ে হিন্দু সম্প্রদায়সহ দেড় শতাধিক পরিবারের যাতায়াতের একমাত্র রাস্তাটি বন্ধ করে দিয়েছেন।

এলাকার বাসিন্দা গোলাম রসুল বলেন, ‘আমাদের বাধানিষেধ সত্ত্বে¡ও সরকারি জমিতে জোরপূর্বক ভবন ও সেপটিক ট্যাংক নির্মাণ করেছেন প্রভাবশালী আনোয়ার ফকির। তিনি মানুষের চলাচলের একমাত্র রাস্তাটিও বন্ধ করে দিয়েছেন নিজের স্বার্থে। তার সন্ত্রাসী বাহিনীর কারণে এলাকার সাধারণ মানুষ অসহায়। ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায় না।

প্রায় ২৫ বছর ধরে সরকারি ওই জমিতে ছোট্ট দোকান বসিয়ে ব্যবসা করে আসা আ. মমিন ও তার স্ত্রী ময়না খাতুনকে জোর করে সেখান থেকে উচ্ছেদের নোটিশ দিয়েছেন আনোয়ার ফকির। মমিন ও ময়না জানান, তারা প্রায় ২৫ বছর ধরে সেখানে ছোট্ট একটি ঘর তুলে ঝাল-মুড়ি আর পেঁয়াজু বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছিলেন। কিন্তু সম্প্রতি আনোয়ার ফকির তাদের সেখান থেকে উঠে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। একমাত্র উপার্জনের জায়গা হারানোর শঙ্কায় তারা এখন দিশেহারা।

সবার চোখের সামনে প্রভাবশালী আনোয়ার ফকির এত সব অন্যায় চালিয়ে গেলেও তার কোনো প্রতিকার না হওয়ায় নিন্দা আর ক্ষোভ প্রকাশ করেন স্থানীয় ইউপি সদস্য সাজেদুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘ওপরমহলে আনোয়ার ফকিরের হাত থাকায় সে এত বড় অন্যায় করেও পার পেয়ে যাচ্ছে। অবিলম্বে সরকারি জমি দখলমুক্তসহ রাস্তা উদ্ধারের দাবি জানাই।

সাহাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মতলেবুর রহমান মিনহাজ ফকির জানান, আনোয়ার ফকিরের দখলবাজির বিষয়টি তিনিও অবগত। সত্য ঘটনা তুলে ধরা সাংবাদিকদের নৈতিক দায়িত্ব উল্লেখ করে এই ইউপি চেয়ারম্যান বলেন, সরকারি সম্পত্তি যেই দখল করুক তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

আর এত সব দখল ও অনাচারের অভিযোগ যার বিরুদ্ধে সেই অভিযুক্ত আনোয়ার হোসেন ফকির বলেছেন, ‘সরকারি জমিতে ট্যাংক নির্মাণ করা যদি অন্যায় হয় তাহলে সরকার আমার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিক। ’ দেড়শ পরিবারের চলাচলের একমাত্র রাস্তা বন্ধের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি আমার জমি ঘিরে রেখেছি, কারও রাস্তা বন্ধ করিনি। ’ আর গাছ কাটার বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন।

আনোয়ার ফকিরের দখলবাজির শিকার এলাকাবাসীর কাছ থেকে লিখিত অভিযোগ পাওয়ার কথা স্বীকার করে ঈশ^রদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পি এম ইমরুল কায়েস বলেন, ‘ইতিমধ্যেই সার্ভেয়ারকে জরিপ করার জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। রিপোর্ট পেলেই প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

আপনার মন্তব্য লিখুন