স্টাফ রিপোর্টার:: ঈদুল ফিতর উপলক্ষে সরকারি কর্মকর্তা–কর্মচারীদের চলতি মাসের বেতন–ভাতা আগামী ২৩ মার্চ দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছে সরকার। গত রোববার অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ এ নির্দেশনা দেয়। এর ফলে অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারীদের মতো পেনশনাররাও একই দিনে তাদের অবসরের ভাতা পাবেন। কিন্তু বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত প্রায় ৬ লাখ শিক্ষক-কর্মচারীর মার্চ মাসের বেতন ঈদের আগে পাচ্ছেন না।
জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (প্রশাসন) মো. শাহজাহান বলেন, ইএফটিতে বেতন দেওয়ার কারণে কিছু জটিলতা তৈরি হয়। সে কারণে জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে বেতন দিতে কিছু সমস্যা হয়েছে। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী ঈদের আগে মার্চ মাসের বেতন দেওয়া সম্ভব হবে না। তবে ঈদ বোনাস ও ফেব্রুয়ারি মাসের বেতন খুব শিগগিরই ছাড় করা হবে।
এদিকে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত সাড়ে তিন লাখ শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন চলতি সপ্তাহে দেওয়ার কথা থাকলেও এখনো বেতন ছাড়ের প্রস্তাব শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠায়নি মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) এডুকেশন ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম (ইএমআইএস) সেল। ফলে চলতি সপ্তাহে ফেব্রুয়ারি মাসের বেতন না পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের প্রশাসন ও অর্থ, মাউশির অর্থ ও ক্রয় এবং ইএমআইএস সেল সূত্র দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে এ তথ্য জানিয়েছে।
জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের উপসচিব (বাজেট শাখা) লিউজা-উল-জান্নাহ বলেন, ‘শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন কিংবা বোনাস ছাড়ের প্রস্তাব আমরা পাইনি। প্রস্তাব পাওয়ার পর তা অনুমোদন করতে এক অথবা দুইদিন সময় লাগতে পারে। ৫ম ধাপের বেতনের প্রস্তাব পেয়েছি।’
নাম অপ্রকাশিত রাখার শর্তে মাউশির এক কর্মকর্তা জানান, ‘জানুয়ারি মাসের দ্বিতীয় লটের অর্থাৎ ৫ম ধাপের বেতনের প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। তবে ফেব্রুয়ারি মাসের বেতন এবং ঈদের বোনাসের অর্থ ছাড়ের প্রস্তাব এখনো পাঠানো সম্ভব হয়নি। আমরা চেষ্টা করছি চলতি সপ্তাহের মধ্যে প্রস্তাব পাঠানোর।’
চলতি সপ্তাহে শিক্ষক-কর্মচারীরা ফেব্রুয়ারি মাসের বেতন পাবেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে ওই কর্মকর্তা আরও জানান, ‘চলতি সপ্তাহে শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন হওয়ার সম্ভাবনা কম। কেননা প্রস্তাব পাঠানোর পর তা অনুমোদনের জন্য দুই-একদিন সময় লাগে। এরপর সেটি চিফ অ্যাকাউন্টস অফিসারের কার্যালয়ে পাঠানো হয়। ফলে চলতি সপ্তাহে ফেব্রুয়ারি মাসের বেতন হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ।’
এর আগে গত শনিবার মাউশি ডিজি প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আজাদ খান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেছিলেন, ‘শিক্ষক-কর্মচারীদের ফেব্রুয়ারি মাসের বেতন চলতি সপ্তাহে দেওয়া হতে পারে। এ বিষয়ে ইএমআইএস সেল থেকে আমাকে একটি লিখিত ফরম্যাট দেওয়া হয়েছে। আগামী ২০ মার্চের মধ্যে তারা বেতন পেতে পারেন।’
জানা গেছে, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ইএফটির মাধ্যমে বেতন-ভাতা পান। তবে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা সরকারি কোষাগার থেকে ছাড় হলেও তা রাষ্ট্রায়ত্ত আটটি ব্যাংকের মাধ্যমে ‘অ্যানালগ’ পদ্ধতিতে ছাড় হয়। এই অর্থ তুলতে শিক্ষকদের নানা ভোগান্তিতে পড়তে হতো।
ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে বেতন-ভাতা ছাড়ের জন্য কয়েক পর্যায়ে অনুমোদনসহ সংশ্লিষ্ট কাজে অনেক ক্ষেত্রেই এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বেতন-ভাতা পেতে দেরি হয়। অনেক সময় পরের মাসের ১০ তারিখের পরও আগের মাসের বেতন-ভাতা জোটে।
এ পরিপ্রেক্ষিতে গত ৫ অক্টোবর বিশ্ব শিক্ষক দিবসে ইএফটিতে বেসরকারি শিক্ষকদের এমপিওর বেতন-ভাতা দেওয়ার ঘোষণা দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। প্রাথমিকভাবে বেসরকারি এমপিওভুক্ত স্কুল-কলেজের ২০৯ জন শিক্ষক-কর্মচারীর অক্টোবর মাসের এমপিও ইএফটিতে ছাড় হয়। পরবর্তী সময়ে গত ১ জানুয়ারি ১ লাখ ৮৯ হাজার শিক্ষক ইএফটির মাধ্যমে বেতন-ভাতার সরকারি অংশের টাকা পেয়েছেন। দ্বিতীয় ধাপে ৬৭ হাজার, তৃতীয় ধাপে ৮৪ হাজার এবং চতুর্থ ধাপে ৮ হাজার ২০০ এর অধিক শিক্ষক-কর্মচারীকে ডিসেম্বর মাসের বেতন দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে তারা জানুয়ারি মাসের বেতনও পেয়েছেন। তবে তাদের ফেব্রুয়ারি মাসের বেতন এখনও হয়নি।