এম এ মাসুদ, সুন্দরগঞ্জ গাইবান্ধা) প্রতিনিধি:: প্রবাদ রয়েছে ‘শরীর ভালো থাকলে মন ভালো থাকে।’ আর মন ভালো থাকলে উপভোগ্য হয়ে ওঠে আমাদের ক্ষুদ্র জীবন। এ জন্য ক্লান্তিময় জীবনকে একটু শ্রান্তি দিতে মাঝেমধ্যেই যেতে হয় শহুরে কোলাহল পূর্ণ পরিবেশ ছেড়ে প্রকৃতির ছোঁয়ায় বেড়ে ওঠা নৈসর্গিক কোনো পরিবেশে। যেখানে প্রশান্ত হয় মন এবং কর্মময় হয়ে ওঠে জীবন।
আর এমনটি চাইলে ইদ ও গ্রীষ্মকালীণ এই লম্বা অবসরের ফাঁকে পরিবারসহ আপনি ঘুরে আসতে পারেন গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের ‘সরোবর পার্ক এন্ড রিসোর্ট।’
প্রকৃতির সান্নিধ্যে গড়ে ওঠা চমৎকার এই পার্কটির অবস্থান উপজেলা সদরের মীরগঞ্জ বাজার থেকে মাত্র ৪ কিলোমিটার দূরের দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে সোনারায় নামক স্থানে।
সতের একর জমির মধ্যখানে বিশাল আকৃতির একটি পুকুর থাকায় স্থানীয়ভাবে এটি ‘সরোবর হিসেবে সমধিক পরিচিত। সরোবরের নীল জলে ফুটে থাকা লাল শাপলা প্রকৃতি প্রেমীদের মন কেড়ে নেবে সহজেই। চমৎকার সব কারুকার্য খচিত মূল তোরণটি পার হলেই দর্শনার্থীদের চোখে পড়বে সুদৃশ্য রাস্তা ও লাইটিং টাওয়ার। আরেকটু এগিয়ে গেলেই পাওয়া যাবে ময়ুর, ইংল্যান্ডের মেন্ডারিন হাঁস, ফেজেন পাখি, রেড লরি, লাভ বার্ড, বাজিগর, কালিন পাখিসহ দেশি-বিদেশি নানান সব পাখির দেখা।
সরোবরের চারপাশে টাইলস লাগানো প্রশস্ত পাড়ে শোভা পাচ্ছে রাম ভুটান, ডুরিয়ান, এ্যাবোকাডো, ক্যান্সার প্রতিষেধক ক্যারোসল ফল এবং আলুবোখারাসহ দেশি-বিদেশি বাহারি সব ফুল ও ফলের গাছ। সেগুলো সরোবরটির সৌন্দর্য বাড়িয়েছে কয়েকগুণ।
সরোবরের নীল জলে মাছের খেলা, লাল শাপলার ছোঁয়া পেতে শিশুসহ সব বয়সীদের জন্য রয়েছে প্যাডেল বোট, প্যাডেল হাঁস, বেবি বোট। রয়েছে বিশাল পুকুরে দর্শনার্থীদের উঠা-নামার জন্য টাইলসনির্মিত সিঁড়ি। বিভিন্ন অনুষ্ঠান, সেমিনার ও অতিথিদের আপ্যায়নের জন্য রয়েছে সুবিশাল ক্যাফেটেরিয়া। সেই ক্যাফেটেরিয়ায় নেই গলা কাটা দাম নেওয়ার কোনো সুযোগ। পার ঘেঁষে জলের ওপরে রয়েছে নান্দনিক বেলকনি। সেই বেলকনিতে খোশগল্প করতে দেখা যায় অনেককেই।
দর্শণার্থীদের পরিবার নিয়ে থাকার জন্য নির্মাণাধীন কটেজগুলোর পূর্ব পাশে তৈরি করা হয়েছে চমৎকার একটি ঝুলন্ত সেতু। পাশেই থাকছে সুইমিং পুলের মাঝখানে ফাউন্টেন।
শিশুদের খেলাধুলা করার জন্য রয়েছে হানি সুইং, টেনিস, ব্যাডমিন্টন, টেম্পলিন, ক্যাটার পিলার কোস্টার। যা দর্শনার্থীদের নজর কাড়বে সহজেই।
ক্লান্তির মাঝে খানিকটা স্বস্তি পেতে দূরদূরান্ত থেকে ছুটে আসছেন নানা বয়সের দর্শনার্থীরা। সকাল ১০টা থেকে বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত প্রকৃতির সান্নিধ্যে থেকে দূর করছেন কাজের ফাঁকে জমে থাকা মানসিক সব ক্লান্তি।
নিরাপদ ও সুন্দর পরিবেশ এবং ক্যাফেটেরিয়ায় অর্গানিক খাবার পেয়ে উৎফুল্ল দর্শানার্থীদের মন। তারা বলছেন, এটি সত্যিই একটি অসাধারণ পার্ক। মনে হয় যেন নৈসর্গিক সৌন্দর্যের এক লীলা ভূমি।
কথা হয় ফিশারিজ পার্কের স্বত্বাধিকারী আরেফিন সরদারের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘উত্তরাঞ্চলের ভ্রমণ পিপাসু মানুষের জন্য একটি ইউনিক পার্কের অভাববোধ থেকেই সরোবর পার্ক এন্ড রিসোর্টটি গড়ে তুলেছি। পার্কটিকে নান্দনিক করতে যা দরকার তার সবই করছি। আশাকরছি, শুধু গাইবান্ধা নয়, এটি হবে উত্তরাঞ্চলের মানুষের জন্য একটি অনন্য পার্ক।