স্টাফ রিপোর্টার:: ঈদের দিন যখন শহরের অলিগলি মুখর হয়ে ওঠে খুশির আমেজে, তখনও নিরবচ্ছিন্ন দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন ব্যাংকের এটিএম বুথের নিরাপত্তাকর্মীরা। উৎসবের এই দিনে যখন অধিকাংশ মানুষ পরিবার-পরিজন নিয়ে আনন্দে মেতে থাকেন, তখন তারা দাঁড়িয়ে থাকেন ব্যাংকের বুথ পাহারায়। দিনের পর দিন, বছরের পর বছর এভাবেই কেটে যায় তাদের ঈদ।
ফেনীর ইসলামী ব্যাংকের এটিএম বুথে দীর্ঘ আট বছর ধরে দায়িত্ব পালন করছেন মোহাম্মদ সিদ্দিকুর রহমান। প্রতিবারের মতো এবারও ঈদুল ফিতর কাটবে তার কর্মস্থলে দায়িত্ব পালন করে। পরিবারের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করার সুযোগ নেই। তিনি বলেন, পরিবারের সবাই যখন ঈদের আনন্দ করে, তখন আমার দায়িত্ব থাকে বুথের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। এটি কষ্টকর হলেও দায়িত্বের প্রতি অবিচল থাকতে হয়। তবে ঈদে সবাই বেতনের সাথে বোনাস পেলেও আমি পাইনি। অল্প টাকায় পরিবার চালাতে হিমশিম খেতে হয় প্রতিনিয়ত।
মহিপালে একটি এটিএম বুথে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা একরামুল হক জানালেন, পরিবারের জন্য টাকা রোজগার করলেও ঈদের আনন্দ ভাগাভাগির সুযোগ তার নেই। তিনি বলেন, পরিবারের সবার জন্য বেতনের টাকা পাঠিয়ে দিয়েছি, কিন্তু ইচ্ছে থাকলেও বাড়ি যেতে পারছি না। ঈদের দিনেও বুথ পাহারার দায়িত্ব পালন করতে হবে।
ইসলামী ব্যাংক ট্রাংক রোড শাখার নিরাপত্তাকর্মী আমির হোসেন জানালেন, এই পেশায় আছেন চার বছর ধরে। প্রথম দিকে পরিবার ছাড়া ঈদ কাটানো কঠিন লাগলেও এখন অভ্যাস হয়ে গেছে। তিনি বলেন, ৮ ঘণ্টা দায়িত্ব পালনের পর আরেকজন এসে দায়িত্ব নেন। ঈদের দিনে বাড়ির কথা মনে পড়ে, কিন্তু দায়িত্ব তো ফেলে রাখা যায় না।
যমুনা ব্যাংকের কলেজ রোড শাখার নিরাপত্তাকর্মী মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম জানালেন, ছয় বছর ধরে তিনি বুথ পাহারার দায়িত্ব পালন করছেন। ঈদের সময় পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানোর সুযোগ না থাকলেও দায়িত্ব পালন করতে পেরে গর্ব অনুভব করেন।
সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের নাজির রোড শাখার নিরাপত্তাকর্মী মোহাম্মদ নুর নবী বললেন, গত আট বছর ধরে ঈদ কাটছে বুথ পাহারার মধ্যে দিয়ে। পরিবারের সবার খুশির জন্য তাদের ছাড়াই ঈদ উদযাপন করতে হয়। তবে মানুষের আমানত রক্ষা করতে পেরে আত্মতৃপ্তি পাই।
মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের বুথে দায়িত্বরত বেলায়েত হোসেন জানান, প্রতিটি বুথে তিনজন নিরাপত্তারক্ষী পালাক্রমে দায়িত্ব পালন করেন। ২৪ ঘণ্টা বুথ পাহারা দিতে তিন শিফটে ভাগ হয়ে তারা কাজ করেন। তিনি বলেন, আমাদের ঈদে ছুটি নেই। কারণ মানুষের আমানত রক্ষা করতে হয়। আমরা চলে গেলে মানুষের আমানত কে পাহারা দেবে?
ফেনী শহরের ৭০টিরও বেশি এটিএম বুথে দায়িত্ব পালন করা নিরাপত্তাকর্মীদের সবার গল্পই একই রকম। যখন সবাই আপন ঠিকানায় ছুটে গিয়ে ঈদ উদযাপনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন, তখন তারা নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছেন নিরলসভাবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শহরের একটি ব্যাংকের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বলেন, বুথের নিরাপত্তাকর্মীরা ব্যাংকের হলেও তাদের নিয়োগ দেয় বিভিন্ন কোম্পানি। তাই ছুটির বিষয়ে আমাদের কিছু করার সুযোগ নেই। মাঝে মাঝে ব্যক্তিগতভাবে সহায়তা করি, তবে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু করার সুযোগ থাকে না।
নিরাপত্তাকর্মীদের জন্য ঈদ মানেই কর্তব্যের মধ্য দিয়ে আনন্দ খোঁজা। পরিবার-পরিজন ছেড়ে দায়িত্ব পালন করতে এসে প্রথমদিকে কষ্ট লাগলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তা অভ্যাস হয়ে গেছে। তবে তারা চান, ঈদের দিনে তাদের জন্যও কিছু বিশেষ ব্যবস্থার উদ্যোগ নেওয়া হোক।