স্টাফ রিপোর্টার:: বাংলাদেশের সংবিধান প্রণেতা ও গণফোরাম প্রতিষ্ঠাতা ড. কামাল হোসেন বলেন, জনগণের রাজনীতি যারা করে তাদের কখনো পালাতে হয় না। আমরা আছি, আমাদের পালাতে হবে না, এদেশের মাটিতেই আমার কবর হবে। আমরা জনগণের উপর নির্যাতন ও নিপীড়ণের রাজনীতি করবো না, যা করলে পালিয়ে যেতে হয়। বাংলাদেশের জনগণ স্বৈরাচারদের যুগে যুগে এই শিক্ষা দিয়েছে যে, জনগণের ক্ষমতা জবর-দখল করলে তাকে পালিয়ে যেতে হয়।
নানা কারণে বিভক্তির চার বছর পরে দুই গ্রুপ ঐক্যবদ্ধ হওয়া ঘোষণা দিয়েছে গণফোরাম। বৃহস্পতিবার (২৯ আগস্ট) জাতীয় প্রেসক্লাবে এক যৌথ ঘোষণাপত্রে গণফোরাম একাংশের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী একথা জানান। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ড. কামাল হোসেন।
অনুষ্ঠানে অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বলেন, আমরা দ্রুততম সময়ে ঐক্যবদ্ধ গণফোরাম জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠান করব। ৩১ বছরের ধারাবাহিকতায় গণফোরামের সব পর্যায়ের নেতা-কর্মী সংগঠক ও সমর্থকদের পক্ষ থেকে আমরা আজকে এই শুভদিনে আমাদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ড. কামাল হোসেনের উপস্থিতিতে গণফোরাম ঐক্যবদ্ধভাবে সকল স্তরে রাজনৈতিক, সাংগঠনিক ও সামাজিক কার্যক্রম অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার ও প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করছি।
কামাল হোসেন বলেন, ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনের মধ্য দিয়ে দেশে গণতন্ত্র ও ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার এক নতুন সুযোগ তৈরি হয়েছে। দেশের জনগণ স্বপ্ন দেখছে এক স্বাধীন ও বৈষম্যমুক্ত নতুন বাংলাদেশের। কোনো অশুভ শক্তি বা ষড়যন্ত্র যেন এই রক্তস্নাত বিজয় ও মহান মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্নের বাংলাদেশ বিনির্মাণে বাধা সৃষ্টি করতে না পারে সেদিকে সজাগ থাকতে হবে। এই অর্জনকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।
আমি আশা করি গণফোরামের নেতা-কর্মীরা সকল বিভেদ ভুলে গিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালনের মধ্য দিয়ে নতুন করে যাত্রা শুরু করবে। তিনি বলেন, ছাত্র-জনতার বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে বিগত ১৫ বছর যাবত ফ্যাসিস্ট সরকারের বন্দিদশা থেকে জনগন নতুন করে মুক্তিলাভ করে। অভিবাদন সংগ্রামী জনতাকে। ছাত্র-জনতা আবারও প্রমাণ করেছে এই দেশ স্বৈরশাসকের নয়, এই দেশ জনগণের।
আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে ড. কামাল হোসেন এবং বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি থেকে বেরিয়ে আসা সাইফুদ্দিন আহমেদ মানিকের নেতৃত্বে ১৯৯৩ সালের ২৯ আগস্টে প্রতিষ্ঠা হয় গণফোরাম। সাইফুদ্দিন আহমেদ মানিকের মৃত্যুর পর সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসীন মন্টু। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই কামাল হোসেনের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড ও নানা সিদ্ধান্তের ফলে খুব বেশিদিন কেউই থাকতে পারেননি দলটিতে।
প্রতিষ্ঠাকালীন অনেক সদস্যই বহু আগে সংগঠন ছেড়েছেন আবার যোগ দিয়েছে অনেকে। এর মধ্যে বড় ঘটনাটি ঘটে ২০২০ সালে করোনা মহামারির মধ্যে, ২৭ সেপ্টেম্বর ২৭ জাতীয় প্রেসক্লাবে বর্ধিত সভা করে আনুষ্ঠানিকভাবে ভেঙে দুই ভাগ হয়ে যায় দলটি। এরপর এক করতে কয়েক দফা উদ্যোগেও নেয়া হয়েয়ছিলো। কিন্তু বাস্তবায়ন হয়নি সেই উদ্যোগ। তবে সবকিছু ছাপিয়ে এবার ঐক্যবদ্ধভাবে যাত্রা শুরু করেছে গণফোরামের দুই অংশ।
বিভক্তির পর একাংশের নেতৃত্বে দেন ড. কামাল হোসেন। ড. রেজা কিবরিয়াকে কেন্দ্র করে দল ভাগ হলেও শেষ পর্যন্ত তিনিও গণফোরামে থাকেননি, যোগ দিয়েছিলেন গণঅধিকার পরিষদে, সেখান থেকেও পরে তিনি দল ছাড়েন। গত বছরের ২৭ অক্টোবর জাতীয় প্রেসক্লাবে বিশেষ কাউন্সিলে কামাল হোসেনকে ইমেরিটাস সভাপতি করে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন করা হয়, যার সভাপতি হিসেবে মফিজুল ইসলাম খান ও সাধারণ সম্পাদক মো. মিজানুর রহমান দায়িত্ব পান। গণফোরামের আরেক অংশের নেতৃত্বে দেন মোস্তফা মহসীন মন্টু। এই অংশে অধ্যাপক আবু সাইয়িদ, অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী প্রমুখ প্রতিষ্ঠাতা সদস্যরা ছিলেন।
গণফোরাম নেতা মোস্তফা মোহসীন মন্টুর সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য রাখেন এস. এম. আলতাফ হোসেন, অ্যাডভোকেট এ.কে.এম. জগলুল হায়দার আফ্রিক, অ্যাডভোকেট মহিউদ্দিন আব্দুল কাদের, অ্যাডভোকেট মেসবাহ উদ্দীন, অ্যাডভোকেট ফজলুল হক সরকার, অ্যাডভোকেট সুরাইয়া বেগম। লিখিত বক্তব্য পাঠ করেণ সিনিয়র অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী।