রাশেদুল ইসলাম রাশেদ: ছাত্র আন্দোলনে ঢাকায় পুলিশের গুলিতে নিহত গাইবান্ধার সাজ্জাতের মৃত্যুতে মামলা দায়ের করেছেন জেলার সাঘাটা উপজেলা এক ছাত্রদল নেতা। তবে, মামলায় নারাজ শহীদ সাজ্জাতের পরিবার। তাদের দাবি, মামলার বিষয়ে কিছুই জানেন না তারা। লিখিত বা মৌখিকভাবেও কোনো অনুমতি দেওয়া হয়নি। পরিবারের অনমুতি ছাড়া অনাকাঙ্খিত এই মামলার ঘটনায় চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পরিবারের সদস্যরা। সন্তানের মৃত্যু ঘিরে ব্যক্তিগত এমন মামলায় ন্যায় বিচারে পেতে আশঙ্কাও করছেন পরিবারটি।
বুধবার (২৮ আগস্ট) ঢাকার আদালতে নিহত সজলের পরিবারের অনুমতি ছাড়াই সাঘাটা উপজেলা ছাত্রদলের সদস্য সচিব মো. মিজানুর রহমান মৃদুল বাদি হয়ে এই মামলা দায়ের করেন। এরআগে গত ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের অসহযোগ আন্দোলনে সাভারে পুলিশের গুলিতে নিহত হয় সজল।
এদিকে এই মামলাটির বিষয়ে জানেনা গাইবান্ধা জেলা বিএনপি এবং ছাত্রদলের জেলার নেতৃবৃন্দও। ফলে মামলাটি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বাণিজ্যের।
মামলায় আসামি করা হয়েছে ফিনিক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান সহ চারজন শিল্পপতিকে। এছাড়া গাইবান্ধার তিনজন সাংসদ এবং সাঘাটা উপজেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক নাসিরুল আলম স্বপন ও ছাত্রলীগ নেতা আব্দুল্লাহ আল মামুনকেও। তবে, মামলায় বাদ পড়েছে সাঘাটা উপজেলা আ.লীগ ও শ্রমিকলীগের বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী-শিল্পপতি নেতার নাম। গুঞ্জন উঠেছে এই মামলায় দেন-দরবারে আর্থিক বাণিজ্যে যাদের সাথে সুবিধা করা যায়নি তাদরেরই নাম দেওয়া হয়েছে এজাহারে। এছাড়া সাম্প্রতিক আগামীতে আ.লীগের যেসব নেতাকর্মী বাগে আসবেন চার্জশীট থেকেও বাদ দেওয়া হবে তাদের নাম। মূলত চাঁদাবাজি করতেই একক সিদ্ধান্তে মামলাটি দায়ের করেছেন ছাত্রদলের ওই নেতা।
মামলার ব্যাপারে শহীদ সাজ্জাত হোসেন সজলের মা শাহিনা বেগম বলেন, মামলা দায়েরর বিষয়ে আমাদেরকে কোনো কিছুই জানানো হয়নি। আমরা কোনো ধরণের অনুমতি দেইনি। আমাদের অনুমতি ছাড়াই ওই ছেলে বাদি হয়ে কেন মামলাটি করলো আমার বুঝে আসেনা। সে আমাদের আত্মীয় নয়, কেউই নয়।
তিনি বলেন, সাজ্জাতের শহীদী সম্মান নষ্ট করার জন্য এসব করা হচ্ছে। আমার ছেলের মৃত্যুকে কোনো দলের কাছে আমি বিক্রি করতে চাইনা। আমার ছেলের মৃত্যু নিয়ে কেউ ব্যবসা করবে, অপরাজনীতি করবে তা হতে পারেনা। আমার ছেলে কোনো রাজনীতি করতোনা। দেশের মানুষের জন্য আমার ছেলে জীবন দিয়েছে। আমরা প্রকৃত অপরাধীদের শাস্তি চাই কিন্তু কোনো নিরাপরাধ মানুষকে ফঁসাতে চাইনা। সে আ.লীগ, জামাত, বিএনপি যে দলেরই হোক।
এসময় এক প্রশ্নের জবাবে শাহিনা বেগম বলেন, "মামলা করলে আমরা করবো, আমরা আমাদের সন্তানকে হারিয়েছি। সেখানে কোনো দলের নেতা কেন মামলা করবে? আমার ছেলে হত্যা একটি ইতিহাস। আমরা অবশ্যই মামলা করবো, তবে সেটি ব্যক্তিগত নয়। আমরা আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালের মামলা করে সারাদেশের শহীদদের বিচার চাইবো।
এসময় তিনি অতিদ্রুত মৃদুলের মামলাটি প্রত্যাহার করে নিতে দাবি জানান। একই সাথে অন্যথায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিবেন বলেও হুশিয়ারি উচ্চারণ করেন।
গাইবান্ধা জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক তারেকুজ্জামান তারেক বলেন, ওই মামলার বিষয়ে আমরা কিছুই জানিনা, আমাদের জানানো হয়নি। জেলার দলীয় কোনো সিদ্ধান্তে মামলাটি হয়নি।
তিনি বলেন, ওরকম কিছু হয়ে থাকলে আমরা কেন্দ্রীয় নেতাদেরকে বিষয়টি জানাবো। তারা অবশ্যই সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিবেন।
এসব বিষয়ে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও মামলার বাদি মিজানুর রহমান মৃদুলকে পাওয়া যায়নি।