সাব্বির আহমেদ জয়,স্টাফ রিপোর্টার:: হাতে সময় কম। ঘনিয়ে আসছে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন। নভেম্বরের মধ্যেই নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার কথা বলেছে নির্বাচন কমিশন।
এই সময়ে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ জোরেশোরে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিলেও বিরোধী দল বিএনপি আন্দোলনের চূড়ান্ত ধাপে যাচ্ছে। এক দফা দাবি আদায়ে লক্ষ্যে মাঠের আন্দোলন তীব্র করার চেষ্টা করছে। তৃণমূল থেকে আন্দোলন পুরোটাই এখন ঢাকাকেন্দ্রিক হয়ে পড়েছে। শুক্রবার তারা ঢাকায় গণমিছিল করার ঘোষণা দিয়েছে। বিএনপি বলছে, এসব আন্দোলনের মাধ্যমেই তাদের নির্বাচনের প্রস্তুতি হয়ে যাবে।
নির্বাচন কমিশন গতকাল জানিয়েছে, ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে বা জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ভোট করতে হলে নভেম্বরে তফসিল ঘোষণা করতে হবে। অন্তত ৪০-৪৫ দিন সময় রেখে তফসিল ঘোষণার প্রস্তুতি নিতে হবে। সাংবিধানিকভাবে ২০২৪ সালের ২৯ জানুয়ারির আগের ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে নির্বাচন কমিশনকে। সে ক্ষেত্রে ১ নভেম্বর শুরু হবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের ক্ষণগণনা। ভোট নিয়ে নির্বাচন কমিশনের এমন তোড়জোড় আয়োজনেও কান দিচ্ছে না বিএনপি। তারা এক দফা দাবিতেই অনড়। এই সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে না। দল নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায় করেই নির্বাচনে যেতে চায়। নেতারা বলছেন, বিএনপি কীভাবে প্রস্তুতি নেবে এটা তাদের ব্যাপার। এখানে দৃশ্যমান হওয়ার কিছু নেই। দাবি আদায়ের পর নির্বাচন প্রস্তুতি নেওয়ার কথা বলছেন তারা।
তবে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, বিএনপি আন্দোলন এবং নির্বাচনের প্রস্তুতি একসঙ্গে নিচ্ছে। আন্দোলনকে প্রাধান্য দিয়ে নির্বাচনের মাঠও গোছানোর চেষ্টা করছে। সম্ভাব্য প্রার্থী বাছাইয়ের অংশ হিসেবে মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে দলের হাইকমান্ড সরাসরি যোগাযোগ রাখছে। তবে আপাতত তাদের মাঠে থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে আন্দোলনে নির্যাতিত কর্মীদের পাশে দাঁড়ানোর কথা বলা হয়েছে।
এমনকি নির্বাচনি ইশতেহার তৈরির জন্যও দলের উচ্চ পর্যায়ের তিন সদস্যের একটি কমিটি কাজ শুরু করেছে। গোপনীয়তার সঙ্গে কাজ চলছে। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার আজ প্রতিষ্ঠিত হলে বিএনপি কালই নির্বাচনে যেতে প্রস্তুত। একটি নিরপেক্ষ গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য বিএনপি যেকোনো মুহূর্তেই প্রস্তুত আছে। তারা মনে করছে দাবি আদায় করেই তারা নির্বাচনে যাবে। ভেতরে ভেতরে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিলেও আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে এসে তারা এটি সামনে আনতে চান না। নির্বাচনের প্রস্তুতির তৎপরতা সামনে এলে আন্দোলন ব্যাহত হতে পারে-এমন শঙ্কা রয়েছে।
সম্প্রতি বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, নির্বাচন নিয়ে আমাদের কোনো সমস্যা নেই। প্রস্তুতিতে কোনো ঘাটতি হবে না। ইতিমধ্যে ২০০ আসনের প্রার্থী মোটামুটি ঠিক করা আছে। কিছু আসন তো পূর্বনির্ধারিত থাকে। সব মিলিয়ে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছে না বিএনপি। সরকারি দল এখন থেকেই জনসভা করে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে, সেখানে বিএনপি কীভাবে প্রস্তুতি নেবে? এমন প্রশ্ন ছিল একাধিক সিনিয়র নেতার কাছে।
জবাবে একজন ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, আমরা যত সাংগঠনিক কার্যক্রম করছি সবই তো নির্বাচনের প্রস্তুতির অংশ। আন্দোলন কিংবা জনসম্পৃক্ত কাজ-সবকিছুর মূলেই ধরতে পারেন নির্বাচন। রাজনীতিবিদ হিসেবে আমরা মানুষের কাছে যাচ্ছি। মানুষ বিএনপিকে বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনে যেতে বারণ করছে।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক বলেন, বিএনপি নির্বাচনমুখী দল।রাজনৈতিক দল হিসেবে ভোটের প্রস্তুতি তো থাকতেই হবে। আন্দোলনকে অগ্রাধিকার দিয়ে নির্বাচনের প্রস্তুতি নেব আমরা। তবে এই সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাব না। সরকার পদত্যাগের পর যেই কমিশন হবে তাদের অধীনে বিএনপি নির্বাচনে যাবে। এই কমিশন কী ঘোষণা করল না করল তা দেখার সময় নেই।
নির্বাচনের প্রস্তুতি প্রসঙ্গে গাইবান্ধা জেলা বিএনপির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মইনুল হাসান সাদিক জানান, তাদের সঙ্গে লন্ডন থেকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সরাসরি অনলাইনে কথা বলেন। একই সঙ্গে আন্দোলন ও নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে বলেছেন। এবার ফাঁকিবাজির রাজনীতির দিন শেষ। যারা মাঠের আন্দোলনে সক্রিয় থাকবেন তারাই নির্বাচনে পুরস্কার পাবেন। সবার আমলনামা আছে হাইকমান্ডের কাছে। তবে এখন মাথায় আন্দোলন ছাড়া কিছু ভাবার সময় নেই তাদের।
এ প্রসঙ্গে স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, নির্বাচন কমিশনের কর্মকা- নিয়ে আমাদের মাথাব্যথা নেই। তারা কী বলল না বলল তাতে কান দেওয়ার সময় নেই। আন্দোলনের মাঠে আছি। তা ক্রমেই জোরালো হচ্ছে। আমরা এই সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাব না। সরকার পদত্যাগ করে নতুন কমিশন গঠন করতে হবে। তারপর প্রস্তুতির প্রশ্ন আসবে।