আজ ৬ ডিসেম্বর ঐতিহাসিক ফেনী “মুক্ত” দিবস।সেদিনের সকালটা ছিল বিজয়ের উল্লাসের। নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যোদ্ধের পর ফেনীর আকাশে উড়েছিল বিজয়ের পতাকা। সেদিনের সকালটা ছিল ফেনীর জনপদের স্বাধীনতার প্রথম সকাল।
একাত্তরের আগুনঝরা এদিনে পাকিস্তান- হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসর আলবদর, আলশামস, রাজাকারদের হটিয়ে ফেনীর জনপদকে স্বাধীন ঘোষণা করা হয়েছিল। ফেনীকে করা হয়েছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাত থেকে দখলমুক্ত।ফেনীতে বিজয়ের আকাশে উড়ে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা। মুক্তিকামী মানুষের উল্লাসে মুখরিত হয় পাকবাহিনীর ধ্বংসযজ্ঞে ক্ষত-বিক্ষত ফেনীর জনপদ। সেদিনের সেই সকাল থেকে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধারা ২নং সাব সেক্টর কমান্ডার ও ১০ম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের প্রতিষ্টাতা অধিনায়ক লেঃ কর্নেল জাফর ইমামের নেতৃত্বে দলে দলে স্বাধীন বাংলাদেশের লাল সবুজের পতাকা হাতে নিয়ে মুক্ত ফেনী শহরে প্রবেশ করতে থাকে।
৫ ডিসেম্বর সন্ধ্যা পর্যন্ত পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকার,আলবদর বাহিনীর দখলে ছিল ফেনীর জনপদ। ফলে পরের দিন ৬ ডিসেম্বর সকালে যখন ফেনীর নিস্তব্ধ জনপদে “জয় বাংলার” স্লোগান শুনা যাচ্ছিল তখন অনেকেই হতচকিত হয়ে ওঠেন। অনেকেই বিশ্বাসই করতে পারছিলো না যে ফেনীর জনপদ মুক্তি পেয়েছে। কিন্তু আস্তে আস্তে মিছিলে যখন চেনাজানা মুক্তিযুদ্ধাদের মুখগুলো দেখা যাচ্ছিলো তখন সবার ভুল ভাঙ্গতে শুরু করলো।তারপর আস্তে আস্তে সাধারণ মানুষ মিছিলে যোগ দিতে শুরু করলো। ক্ষনিকের মধ্যে ফেনী শহরে জনতার ঢল শুরু হল। জয় বাংলার শ্লোগানে আকাশ বাতাস মুখরিত হয়ে সবাই বিজয় উল্লাসে ফেটে পড়েছিল।রাস্তার দুই পাশ থেকে সবাই অভ্যর্থনা জানাচ্ছিলো। ছোট ছোট ছেলে- মেয়েদের কোলে নিয়ে মায়েরা মিছিলের ধ্বনি শুনছিল আর বড় বড় নিশ্বাস ফেলে স্বস্তি নিচ্ছিলো। পাশ্ববর্তী দেশ ভারতের সাথে তিন দিক থেকে ভারতের রয়েছে সীমান্ত। ফলে ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ফেনীতে ব্যাপক অত্যাচার নিপীড়ন ও নির্মম হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে।ফেনী সীমান্তে মুক্তিযুদ্ধের বেশ কয়েকটি যুদ্ধ হয়েছিল তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো শুভপুর ও বিলোনিয়া যুদ্ধ।
গৌরবোজ্জ্বল এদিনটি পালনের জন্য বিভিন্ন সংগঠন বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করে থাকেন। ঐতিহাসিক ও গৌরবোজ্জ্বল দিনটি স্মরণে শহীদদের বেদীতে শ্রদ্ধা নিবেদন, বিজয় র্যালি ও মুক্তিযুদ্ধা সমাবেশের আয়োজন করা হলেও বর্তমান পরিস্থিতির কারণে এবার সীমিত পরিসরে আয়োজন করবে জেলা প্রশাসন। সীমিত পরিসরে দিনটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করবেন ফেনী জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিল ও জেলার বিভিন্ন সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান।