আজ ১৬ আগস্ট। কবি, কথাসাহিত্যিক ড. শাফিক আফতাবের জন্মদিন। তিনি ১৯৭৬ সালের ১৬ আগষ্ট উত্তরের জনপদ গাইবান্ধা জেলার তিস্তা বিধৌধ সুন্দরগঞ্জ উপজেলার শ্রীপুর ইউনিয়নের ধর্মপুর (মুন্সিপাড়া) গ্রামের একটি সম্ভান্ত্র মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।
ড. শাফিক আফতাব একাধারে একজন কবি, কথাসাহিত্যিক, গবেষক, সমালোচক, শিশুসাহিত্যিক ও গীতিকার। শূন্য দশকে কবিতার মধ্য দিয়ে তিনি সাহিত্য জগতে আবির্ভূত হন। ইতোমধ্যেই তিনি ধ্রুপদী কবি হিসেবে অভিধা পেয়েছেন। সাম্প্রতিক কাব্যধারায় তিনি নিরীক্ষাপ্রবণ কবিতা রচনা করে চলেছেন। তাঁর কবিতায় বাঙালি জীবনধারার চিরায়ত রূপটি ফুটে উঠতে দেখা যায়। গবেষণা সহিত্যে রেখেছেন নিজের নিজস্বতা। সমালোচনা সাহিত্যে আছে তাঁর বিদগ্ধ পাণ্ডিত্য।
||আরো পড়ুন: আজ শূণ্য দশকের কবি শাফিক আফতাবের জন্মদিন
||আজ বেদনাবিধুর জাতীয় শোক দিবস!
|| ঘুম থেকে উঠুন, দেশটাকে বাঁচাতে হবে: শামীম ওসমান
গ্রামের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তাঁর শিক্ষা জীবন শুরু।মাঠেরহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক শেষ করে ধর্মপুর ডি ডি এম উচ্চ বিদ্যালয়ে মাধ্যমিক শেষ করেন। পরে নাটোর নবাব সিরাজউদ্দেৌলা সরকারি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করেন। আবারও নিজ গ্রামে ফিরে এসে ধর্মপুর আব্দুল জব্বার ডিগ্রি কলেজ (বর্তমান নাম: ধর্মপুর ডিগ্রি কলেজ) থেকে বিএ (সম্মান) করেন। তিনি বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে বিএ (সম্মান) সহ এমএ (১৯৯৮, জগন্নাথ কলেজ), এমফিল (২০১২, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়), পিএইচডি (গবেষক) জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়) অর্জন করেন। ঢাকা লিবার্টি ল' কলেজ থেকে বিশেষ শিক্ষা হিসাবে এলএলবি (প্রথম পর্ব) করেন। এছাড়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট থেকে তুর্কি ভাষার কোর্স সম্পন্ন করেছেন।
সাংবাদিকতা, প্রকাশনা ও কয়েকটি কলেজে অধ্যাপনা দিয়েই তাঁর কর্মজীবনে পদার্পন। পাশাপাশি করছেন নিয়মিত লেখালিখি। বর্তমানে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের অধ্যাপক হিসেবে নিয়োজিত। তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেছেন।
এ পর্যন্ত তাঁর শতাধিক গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে।উল্লেখযোগ্যগ্রন্থ: এবার ধরা দাও (কবিতা, ২০০০), উচ্ছ্বাস (কবিতা, ২০০১), পরিত্যক্ত পদবলি (কবিতা, ২০০২), এক বিকেলে (কবিতা, ২০০৪), নিঃসঙ্গ নির্জন (কবিতা, ২০০৫), ভাঙনের শব্দ (কবিতা, ২০১১), বসন্ত বিষণœ সন্ধ্যা (কবিতা, ২০১৪), শওকত আলীর উপন্যাস: কলাকৌশল ও বৈশিষ্ট্য (প্রবন্ধ-গবেষণা, ২০১৪), ধানফুল (কবিতা, ২০১৫), অরণ্যে বালুকাবেলা ও অন্যান্য গল্প (গল্প, ২০১৫), বাংলা উপন্যাসে নারী: সমাজ পরিপ্রেক্ষিত ও স্বাধিকার চেতনা (প্রবন্ধ-গবেষণা, ২০১৫), পাঁচ দশকের বাংলা জনপ্রিয় উপন্যাস: প্রেক্ষাপট ও পাঠসমীক্ষা (প্রবন্ধ-গবেষণা, ২০১৫), শওকত আলীর রাজনৈতিক উপন্যাস: পরিপ্রেক্ষিত ও প্রকরণ (প্রবন্ধ-গবেষণা, ২০১৫), শওকত আলীর উপন্যাস: মুক্তিযুদ্ধ ও ঐতিহ্য (প্রবন্ধ-গবেষণা, ২০১৫), বাংলাদেশের উপন্যাস: নারীর রূপ ও রূপায়ণ (প্রবন্ধ-গবেষণা, ২০১৫), বাংলা ভাষার জন্মকথা ও অন্যান্য (প্রবন্ধ, ২০১৫), সাহিত্যের ধ্রুপদী ভাবনা (প্রবন্ধ, ২০১৬), বঙ্কিম থেকে আখতারুজ্জামান ইলিয়াস (প্রবন্ধ, ২০১৮), কথাসাহিত্যের প্রসঙ্গ অনুষঙ্গ (প্রবন্ধ, ২০১৭), চিরায়ত সাহিত্যপ্রবন্ধ (প্রবন্ধ, ২০১৮), মালতিমঙ্গল (কবিতা, ২০১৮), জোছনায় জলবতী রাত (কবিতা,২০১৮), ভালোবাসার পদাবলি (কবিতা, ২০১৮) লিবিডো লিরিক (কবিতা, ২০১৮), সাহিত্যতত্ত্ব (প্রবন্ধ, ২০২০). সাহিত্যের রূপ-রীতি (প্রবন্ধ, ২০২০), পলাশী থেকে রেসকোর্স (ইতিহাস ভিত্তিক রচনা, ২০২০), কবিতাসমগ্র-১ (২০২০), মুক্তিযুদ্ধের নির্বাচিত গল্প (সম্পাদনা, ২০২০), ম্যাক্মিম গোর্কীর মা ও অন্যান্য প্রবন্ধ (প্রবন্ধ, ২০২০), ছন্দের সহজপাঠ ও অলঙ্কার (পাঠ্যভুক্ত, ২০১৮), সাহিত্যের রূপ ও রসতত্ত্ব (অনার্স পাঠ্যক্রম, ২০১৯), সাহিত্যের রূপতত্ত্ব ও অলঙ্কার (অনার্স পাঠ্যক্রম, ২০১৮), শওকত আলী: জীবন শিল্পের উন্মেষ (প্রবন্ধ, ২০১৯), বাঙালির মুক্তি আন্দোলন (ইতিহাস ভিত্তিক রচনা, ২০২০), বিচ্ছিন্ন বেদনাগুচ্ছ (কাব্য, ২০২০), প্যরিচাঁদ থেকে আখতারুজ্জামান ইলিয়াস (সমালোচনা, ২০২০), জনপ্রিয় কবিতার ধারা (সমালোচনা, ২০২০), চিরাযত উপন্যাসের ধারা (প্রবন্ধ, ২০১৯), কথাসাহিত্যের কথামালা (সমালোচনা, ২০২০), পরালোক (কবিতা, ২০১৮), হে অন্ত্যজ, হে ব্রাত্য (কবিতা, ২০১৯), বাঙালির, মুক্তি আন্দোলন: পরিপ্রেক্ষিত ও বঙ্গবন্ধু (ইতিহাসভিত্তিক রচনা, ২০২০), বঙ্গবন্ধুর ভাষণ ও ভাষারীতি (প্রবন্ধ, ২০২০), পরিদের দেশে (শিশুতোষ ছড়া, ২০১৯), ভোমরার বিয়ে (শিশুতোষ ছড়া, ২০২০), শিরোপার মহাকাশ ভ্রমণ (সাইন্স ফিকশন, ২০১৯), চন্দ্রদ্বীপের রাজকন্যা (গল্প, ২০২০), একটি নক্ষত্র নিভে গেছে (গল্প, ২০১৯)।
এছাড়াও সম্পাদনা করেছেন ৪০ এর অধিক যৌথ গ্রন্থ। এরমধ্যে: শওকত আলীর রচনাসমগ্র (০১-১২তম খণ্ড), সেলিনা হোসেন রচনাবলি (০১-চলমান), বঙ্কিম-রবীন্দ্রনাথ-শরৎসাহিত্য উল্লেখযোগ্য।
কবি ড. শাফিক আফতাব টেলিভিশন ও বেতারে দেশের বিভিন্ন ইস্যু ও সাহিত্য বিষয়ে ত্রিশের অধিক সাক্ষাৎকার প্রদান করেছেন। এছাড়াও, তাঁর রচিত বেশকিছু কবিতা বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গে আবৃত্তি হয়েছে। তাঁর লেখা কিছু গান ইতোমধ্যেই বিভিন্ন মিডিয়ার প্রচারিত হয়েছে।
কবি ড. শাফিক আফতাব দেশের বিভিন্ন সাহিত্য, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের বিভিন্ন দায়িত্ব দক্ষতার সাথে পালন করে যাচ্ছেন। এছাড়াও তিনি বিভিন্ন সাহিত্য, সামাজিক ও সংস্কৃতিক সংগঠনের সাথে জড়িত রয়েছেন।
কবি ড. শাফিক আফতাব কর্মে স্বীকৃতি স্বরুপ পেয়েছেন চে গুয়েভারা সাহিত্য পুরস্কার (২০১৮), নজরুল সাহিত্য পুরস্কার (২০১৮), মাদার সেরেসা সাহিত্য পুরস্কার (২০১৯)।