শুক্রবার আরবিতে ইয়ামুল জুমা বলে। অর্থাৎ জুমার দিন। এই দিনের তাৎপর্য ও গুরুত্ব অপরিসীম। সপ্তাহের এই দিনটিকে গরীবের হজের দিন বলা হয়। এই দিনে জুমার নামাজ পড়া হয়। লোকজনেরা জুমার নামাজ পড়ার জন্য মাসজিদে সমবেত হয়। একত্রে নামাজ আদায় করে। জুমার দিন মাসজিদে যে আগে প্রবেশ করবে তাকে আল্লাহ তায়ালা কুরবানির সওয়াব দেয়। পরবর্তি ধাপে ধাপে এই সওয়াব দেওয়া হয়। হাদিস শরীফে আছে যে, আব্দুল্লাহ্ ইব্নে ইউসুফ (রা.) ও আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ (সা.)
বলেছেন, যে ব্যক্তি জুমার দিন জানাবত (ফরজ) গোসলের মত গোসল করে সালাতের
জন্য আগমন করে, সে যেন একটি উট কুরবানী করল। যে ব্যক্তি দ্বিতীয় পর্যায়ে
আগমন করে, সে যেন একটি গাভী কুরবানী করল। যে ব্যক্তি তৃতীয় পর্যায়ে আগমন করে, সে যেন একটি শিং বিশিষ্ট দুম্বা কুরবানী করল। চতুর্থ পর্যায়ে যে আগমন করে সে যেন একটি মুরগী কুরবানী করল। পঞ্চম পর্যায়ে যে আগমন করল সে যেন একটি ডিম কুরবানী করল। পরে ইমাম যখন খুতবা প্রদানের জন্য বের হয় তখন ফেরেশতাগণ খুতবা শোনার জন্য হাজির হয়ে থাকেন।
আবু নুআইম (রাহ.) ও আবু হুরায়ারা (রা.) থেকে বর্ণিত, জুমার দিন হজরত ওমর ইব্নে খাত্তাব (রা.) খুতবা দিচ্ছিলেন, এমন সময় এক ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ করেন। হজরত ওমর (রা.) তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, সালাতে সময় মত আসতে তোমরা কেন বাধাগ্রস্ত হও? তিনি বললেন, আজান শোনার সাথে সাথেই তো আমি অজু করছি। তখন হজরত ওমর (রা.) বললেন, তোমরা কি নবি করিম (সা.) কে এ কথা বলতে শোননি যে, যখন তোমাদের কেউ জুমার নামাজে রওয়ানা হয়, তখন সে যেন গোসল করে নেয়।
জুমার দিনের বৈশিষ্ট্য
ইসলামি শরিয়তের বিধানে জুমার দিনের মাহাত্ম্য সীমাহীন। এই দিন মানব জাতির আদি পিতা- হজরত আদম (আ.) এর দেহের বিভিন্ন অংশ সংযোজিত বা জমা করা হয়েছিল বলেই দিনটির নাম জুমা রাখা হয়েছে। জুমার দিনকে আল্লাহ্পাক সীমাহীন
বরকত দ্বারা সমৃদ্ধ করেছেন। এটি সপ্তাহের সেরা দিন। হাদিস শরিফের বর্ণনা
অনুযায়ী এই বরকতময় দিনটি আল্লাহ্পাক বিশেষভাবে উম্মতে মুহাম্মদিকে দান করেছেন। নবি করিম (সা.) ইরশাদ করেন, সর্বাপেক্ষা উত্তম ও বরকতময় দিন হচ্ছে জুমার দিন। এই পবিত্র দিনে হজরত আদম (আ.) কে সৃষ্টি করা হয়েছিল এবং এই দিনে তাঁকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয়। (মুসলিম শরিফ) জুমার সমগ্র দিনটিই অপেক্ষার : হাদিস শরিফের বর্ণনা অনুযায়ী আল্লাহ্পাক জুমা দিবসের মধ্যে এমন একটি মুহূর্ত লুকিয়ে রেখেছেন, যে সময়ে দোয়া অবশ্যই কবুল হয়। আল্লাহর রাসূল (সা.) বলেন, জুমার সমগ্র দিবসটির মধ্যে এমন একটি মুহূর্ত
লুকিয়ে আছে যে সময়টাতে কোন বান্দা যদি নামাজরত থাকে বা তাসবিহ্-তাহলিল কিংবা দোয়ায় লিপ্ত থাকে তবে আল্লাহ্পাক তাঁর আকুতি অবশ্যই কবুল করে থাকেন। এই হাদিসের মর্ম অনুযায়ী বুঝা যায় যে, জুমার দিন সবটুকুই অপেক্ষার। আল্লাহ নিকট দোয়া কবুল করানোর জন্য দিনভরই প্রস্তুতি থাকতে হবে। বিশেষ সেই মূল্যবান মুহূর্তটি কখন, এ সম্পর্কে বিশেষজ্ঞ আলেমগণের বিভিন্ন মত রয়েছে। কেউ বলেছেন, ফজরের
সময় থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত এই মুহূর্তটি রয়েছে। কারো মতে জুমার সময় শুরু
থেকে খুতবা ও জুমার নামাজ শেষ হওয়া পর্যন্ত এই সময়টি হতে পারে। কারো মতে
জুমার দিন আসরের সময় থেকে সূর্যাস্তের সময় পর্যন্ত এই সময় হতে পারে। এই
ধরনের আরও কিছু মত পাওয়া যায়। হাদিস শরিফে জুমার দিনকে সাপ্তাহিক
ঈদের দিন বলে ঘোষণা করা হয়েছে। বলা হয়েছে, জুমা তোমাদের পারস্পরিক দেখা
সাক্ষাত ও সাপ্তাহিক ঈদের দিন। তাই এই দিনটি রোজার জন্য নির্ধারিত করা সমীচীন নয়। জুমার আগের রাত্রিটিও বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। হাদিস শরিফে বলা হয়েছে, জুমার পূর্ববর্তী রাতে বনি আদমের সমস্ত আমল মহান আল্লাহর দরবারে পেশ করা হয়। (বুখারি, আহমদ)। জুমার দিনে বিশেষ ৬ টি সুন্নত। গোসল করা, মাসজিদে আজানের সঙ্গে সঙ্গে যাওয়া, মাসজিদে পায়ে হেঁটে যাওয়া, ইমামের কাছাকাছি বসা, খুব মনযোগ সহকারে খুতবা শোনা, মাসজিদে অনর্থক কথাবার্তা না বলা।