বাংলাদেশ আগামী ফেব্রুয়ারিতেই স্বল্পোন্নত দেশে থেকে উন্নয়নশীল দেশের স্তরে পৌঁছে যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি বলেছেন, আগামী ফেব্রুয়ারিতে তৃতীয় অ্যাসেসমেন্ট সভা হবে। আশা করি সেই সময় আমরা এলডিসি থেকে বেরিয়ে আসব এবং পরবর্তী স্তরে (উন্নয়নশীল) পৌঁছে যাবো।
বুধবার (১৩ জানুয়ারি) অনলাইনে অনুষ্ঠিত অর্থনৈতিক ও সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান।
এলডিসি গ্রাজুয়েশন নিয়ে গতকাল মঙ্গলবার জাতিসংঘের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরেছে, সে বিষয়ে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা আশা করে আছি এলডিসি থেকে বেরিয়ে আসব এবং গ্রাজুয়েশন করব, উন্নয়নশীল দেশের দিকে যাবো। সেটি করার জন্য কিছু ক্রাইটেরিয়া আছে, সেটি জাতিসংঘ দেখে। এবং এইজন্য প্রত্যেক দেশকে যদি ইচ্ছা পোষণ করে যে তারা গ্রাজুয়েশন চায়, তারা এলডিসি থেকে বেরিয়ে আসতে চায় তাহলে তাদের জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভলপমেন্ট পলিসিকে জানাতে হয়। এরা ত্রিবার্ষিক পর্যালোচনা সভায় বসে এবং এটি তাদের পরামর্শ অনুযায়ী একটি দেশকে আপগ্রেড করা হয়, নিম্নস্তর থেকে উচ্চস্তরে নিয়ে আসা হয়। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ২০১৮ সালে এই কমিটি পর্যালোচনা সভা করেছিল। সেই সভায় এই কমিটিকে খুশি করতে কমিটির যে চাহিদা সেটি আমরা পূরণ করেছিলাম। তিনটি চাহিদা সেখানে আছে। দেশের ইকোনমিক ভারনারেবল ইনডেস্ক, হিউম্যান অ্যাসেট ইনডেক্স এবং পার ক্যাপিটা ইনকাম। তিনটি বিষয় দেখে একটি দেশকে স্বীকৃতি দেয়া হয়।’
তিনি আর বলেন, ‘তবে এটি একটি সভায় করা হয় না, এই কমিটি পরবর্তী সভায় যখন আবার বসবে প্রথম সভায় যারা ক্রাইটেরিয়াগুলো মিট করতে পারবে এবং দ্বিতীয় সভায় যারা ক্রাইটেরিয়া মিট করতে পারে তাদেরকেই গ্রাজুয়েশনের জন্য সিলেক্ট করা হয়। আমরা ২০১৮ সালে এই কমিটি যখন বসেছিল সে সময় আমরা আবেদন করেছিলাম এবং আমরা সেখানে অ্যাসেসমেন্ট যে তিনটি ক্রাইটেরিয়া আছে, ইকোনমিক ভারনারেবল ইনডেস্ক, হিউম্যান অ্যাসেট ইনডেক্স এবং পার ক্যাপিটা ইনকাম যেটা মিনিমাম থাকে তারচেয়ে বেশি আমাদের, সেটা পূরণ করেছিলাম। যেহেতু এটা প্রথম অ্যাসেসমেন্ট ছিল আমাদের অপেক্ষা করতে হয়েছে দ্বিতীয় অ্যাসেসমেন্ট সভার জন্য। তৃতীয় অ্যাসেসমেন্ট সভাটি আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে হবে, সেসময় আমরা আশা করি এলডিসি থেকে বেরিয়ে আসব। এবং আমরা পরবর্তী যে স্তর (উন্নয়নশীল) সে স্তরে পৌঁছে যাবো।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘ইকোনমিক ভারনারেবিলিটি ইনডেস্কের জন্য একটি দেশকে কমপক্ষে ৩২ পয়েন্ট অর্জন করতে হয়। আমরা সেখানে ২৭ পয়েন্ট অর্জন করেছি, কম আছে আমাদের। হিউম্যান অ্যাসেট ইনডেক্সে একটি দেশের ৬৬ পয়েন্ট থাকতে হবে আমাদের আছে ৬৫, আমরা এখানেও বেশি আছি এবং পার ক্যাপিটা ইনকাম একটি দেশের অ্যাট্রাক্ট ম্যাথোডে করা হয়, এবং সেই ম্যাথোডে গ্রাজুয়েশনের জন্য দরকার ১ হাজার ২১০ ডলার, আমাদের আছে ১ হাজার ৬৪০ ডলার। তাই তিনটি ক্রাইটেরিয়া আমরা পূরণ করেছি। আমরা আশাবাদী, এবার দ্বিতীয় বৈঠকে আমরা উত্তরণ ঘটাতে পারব, নিচু স্তর থেকে উঁচু স্তরে যাওয়ার জন্য। আমরা স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। এবং আমরা আশাবাদী, এটা অর্জন করতে পারব। এই সময়টি একটি ঐতিহাসিক মূুহূর্ত। জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের শততম জন্মবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি। এই সময় যদি আমরা অর্জনটি করতে পারি, তাহলে সেটা হবে সবচেয়ে বড় একটি সফলতা।’
২০১৮ সালে স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করে বাংলাদেশ। ওই বছর জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসি এই ঘোষণা সংক্রান্ত একটি চিঠি জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেনের কাছে হস্তান্তর করে। তবে জাতিসংঘের কাছ থেকে উন্নয়নশীল দেশের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতির জন্য বাংলাদেশকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।