অবশেষে বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে চাঞ্চল্যকর ১৭ দিন বয়সী নবজাতক হত্যার রহস্যের জট খুলেছে। আর কেউ নয় মা হত্যা করেছে তার নবজাতক সন্তানকে।
হত্যার বর্ণনা ও দায় স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে হত্যার শিকার সোহানার মা শান্তা আক্তার পিংকি।
শনিবার (২৮ নভেম্বর) দুপুরে বাগেরহাটের পুলিশ সুপার পংকজ চন্দ্র রায় এসব তথ্য জানিয়েছেন।
বাগেরহাটের পুলিশ সুপার পঙ্কজ চন্দ্র রায় বলেন, প্রথম থেকেই আমরা নবজাতক বাচ্চা সোহানা হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখেছি। যেহেতু ঘটনাটি খুবই স্পর্শকাতর বিধায় ঘটনাস্থল পরিদর্শন, পরিবারের সঙ্গে কথোপোকথন ও বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করি।
শুরু থেকেই আমাদের ধারণা ছিল হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে পরিবারের কেউ জড়িত থাকতে পারে। তারই ধারাবাহিকতায় আমরা শিশুটির বাবা সুজন খানকে গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ এবং রিমান্ড আবেদন করি। আদালত সুজনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। সুজনকে জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে আমাদের মনে হয় আরও বিস্তারিত তথ্যের জন্য নবজাতকের মা ও বাবাকে মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন। দুইজনকে মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে শিশুটির মা আমাদের কাছে হত্যার বর্ণনা দেয়। নিজেই নিজের সন্তানকে হত্যা করেছে বলে স্বীকার করেন।
পরে শুক্রবার (২৭ নভেম্বর) বিকেলে বাগেরহাট জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. খোকন হোসেনের সামনে শিশুটির মা নবজাতক সোহানা হত্যার দায় স্বীকার করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন যা আদালত রেকর্ড করেছেন। সব তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ এবং সংশ্লিষ্ট সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে অতিদ্রুত সময়ের মধ্যে এ মামলার চূড়ান্ত রিপোর্ট দেওয়া হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
জিজ্ঞাসাবাদে শান্তা আরও জানিয়েছেন, তিনি রাতে ঘুমানোর পরে তার শরীরে প্রচণ্ড জ্বালা শুরু হয়। নিজের বাচ্চাকে কোলে নিয়ে বের হয়ে বাড়ির সামনের খাল, বাগান ও পুকুরের পাড়ে দৌঁড়াদৌড়ি করেন। একপর্যায়ে সন্তানকে পুকুরের ঘাটে জামরুল গাছের নিচে ফেলে দিয়ে ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়েন। রাত দেড়টার দিকে ঘুম ভেঙে সন্তানের জন্য কান্নাকাটি শুরু করেন শান্তা।
হত্যার শিকার নবজাতক সোহানার দাদা ও মামলার বাদী আলী হোসেন বলেন, আমার সন্তান সুজন খান নির্দোষ। আমি তার মুক্তি চাই। আমি নাতিও হারালাম, আবার ছেলেও জেলে এই বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।
সুজনের বোন রোজিনা বেগম বলেন, শান্তা ভাবি আমাদের বাড়িতে আসার পরে বেশ কয়েকবার অস্বাভাবিক আচরণ করে বেহুঁশ হয়ে পড়েছেন। আমরা তাকে স্থানীয় ওঝা-কবিরাজ দেখিয়েছি। তারা বলেছিল ভাবির সঙ্গে জ্বীন রয়েছে।
রোববার (১৫ নভেম্বর) রাতে মোরেলগঞ্জ উপজেলার গাবতলা গ্রামে বাবা সুজন খান ও মা শান্তা আক্তারের সঙ্গে ঘুমিয়ে ছিল ১৭ দিন বয়সী নবজাতক সোহানা। মধ্য রাতে ঘুম ভেঙে তারা দেখেন শিশুটি হারিয়ে গেছে। সোমবার (১৬ নভেম্বর) ভোর থেকে পুলিশের একাধিক টিম শিশুটিকে উদ্ধারে অভিযান শুরু করলেও কোনো কূল-কিনারা পাচ্ছিল না। সোমবার (১৬ নভেম্বর) রাতে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে মোরেলগঞ্জ থানায় মামলা করেন শিশুটির দাদা আলী হোসেন খান। ১৮ তারিখ বুধবার ভোরে ফজরের নামাজের পর নিজ ঘরের সামনের পুকুরে নাতির মরদেহ ভাসতে দেখেন আলী হোসেন। পরে পুলিশ শিশুটির মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য বাগেরহাট সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। মর্মান্তিক এই হত্যাকান্ডের তথ্য উদঘাটনে বাগেরহাট পুলিশ সুপার পংকজ চন্দ্র রায়ের প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ তৎপরতার জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন এলাকাবাসী।