স্টাফ রিপোর্টার:: কুষ্টিয়া জেলার সাতটি থানায় নাশকতার অভিযোগে ১৩টি মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। এর মধ্যে কুষ্টিয়া সদর মডেল থানায় ছয়টি নাশকতা মামলা রয়েছে। নাশকতা মামলাগুলোর একটিতে আসামির তালিকায় নাম আছে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা আরিফুল ইসলামের। আরিফুল ইসলাম কুষ্টিয়া সদর উপজেলার আলামপুর ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের কোষাধ্যক্ষ। তিনি আলামপুর ইউনিয়নের স্বস্তিপুর গ্রামের বাসিন্দা।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, বিএনপির অবরোধ কর্মসূচি চলাকালে গত ৫ নভেম্বর রাতে সদর উপজেলার ভাদালিয়া বাজারে অবস্থান করছিলেন মামলার বাদী আলামপুর পুলিশ ক্যাম্পের আইসি মঞ্জুরুল ইসলাম। এ সময় তিনি খবর পান একদল মানুষ কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ মহাসড়কের বালিয়াপাড়া বাসস্ট্যান্ড মোড়ে মশাল এবং টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করছে। এমন সংবাদের ভিত্তিতে সেখানে গিয়ে বাদী দেখতে পায় কয়েকজন সড়ক অবরোধ করে গাড়ি ভাঙচুর করছে। এ সময় পুলিশ তাদেরকে থামানোর চেষ্টা করলে পিকেটাররা পুলিশকে লক্ষ করে ইট পাটকেল নিক্ষেপ করে পালিয়ে যায়। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ ইমরান হোসেন বাপ্পী নামের একজনকে আটক করে।
এ বিষয়ে গত ৬ নভেম্বর রাতে কুষ্টিয়ার সদর উপজেলার আলামপুর পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ উপ-পরিদর্শক মঞ্জুরুল ইসলাম বাদী হয়ে কুষ্টিয়া মডেল থানায় নাশকতার ওই মামলাটি দায়ের করেন। এ মামলায় ২১ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ২০ থেকে ৩০ জনকে আসামি করা হয়েছে। এতে ৮ নম্বর আসামি আশরাফুল ইসলামের সঙ্গে ১৪ নম্বর আসামি করা হয়েছে তার ভাই স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা আরিফুল ইসলামকে। তবে এ মামলায় ইমরান হোসেন বাপ্পী নামের একজনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
কুষ্টিয়া সদর উপজেলার আলামপুর ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের কোষাধ্যক্ষ আরিফুল ইসলাম জানান, আমি সদর উপজেলার আলামপুর ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের কোষাধ্যক্ষ পদে আছি। দলীয় গ্রুপিংয়ের কারণে প্রতিপক্ষের লোকজন ষড়যন্ত্র করে স্থানীয় পুলিশ ক্যাম্পের আইসিকে ম্যানেজ করে নাশকতার মামলায় আমার নাম জড়িয়ে দিয়েছে। আমার ভাই বিএনপির কর্মী হলেও তার সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। সে ঢাকায় থাকে। আমি থাকি গ্রামের বাড়ি স্বস্তিপুর।
জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের পক্ষ থেকে তাকে দলের নেতা বলে দাবি করা হয়েছে। নাশকতার মামলায় তার নাম দেখে বিস্মিত নেতা-কর্মীরা। প্রতিবাদ জানিয়েছেন তার দলের নেতারা।
এ বিষয়ে সদর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক ইলিয়াস খান সাংবাদিকদের বলেন, আরিফুল সদর উপজেলার আলামপুর ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের কোষাধ্যক্ষ। সে অনেক পুরনো এবং একনিষ্ঠ কর্মী। আরিফ গত দুইবার সংসদ নির্বাচনে নৌকার পক্ষে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফের পোলিং এজেন্ট ছিলেন। তিনি কোনোভাবেই নাশকতার সঙ্গে জড়িত না। সেখানকার স্থানীয় গ্রুপিংয়ের কারণে তাকে ফাঁসানো হয়েছে।
আরিফুলের দলীয় পরিচয় নিশ্চিত করে কুষ্টিয়া জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক মানব চাকি বলেন, আরিফুল আমাদের দলের একনিষ্ঠ কর্মী। তার বিরুদ্ধে পুলিশ মামলা করেছে। প্রতিপক্ষের লোকজন ষড়যন্ত্র করে মামলায় ফাঁসিয়েছে। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। এবিষয়ে আমরা আমাদের নেতাদের সঙ্গেও কথা বলেছি।
মামলার বাদী আলামপুর পুলিশ ক্যাম্পের আইসি উপ-পরিদর্শক মঞ্জুরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, এই মামলা সম্পর্কে বা এর আসামি কারা তা আমি জানি না। আমি ভাদালিয়া বাজারে অবরোধের ডিউটিতে ছিলাম, আমাকে ওসি স্যার ডেকে মামলার এজাহারে সই করতে বলেন। যেহেতু আমি এই এলাকার আইসি তাই আমাকে মামলার বাদী করা হয়েছে। আরিফুল যে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত তা আগে জানতাম না।
কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দ আশিকুর রহমান বলেন, আমরা যাদের গ্রেপ্তার করি তাদের কাছ থেকে নাম জেনে আসামির তালিকা করা হয়। আরিফুল জড়িত না হলে তার নাম বাদ দেয়া হবে।