রাজশাহী প্রতিনিধি :: দেশে জুলাই আগস্ট বিপ্লবের পর মনোবল হারিয়ে ফেলে পুলিশ।জনবান্ধব পুলিশ গড়তে ও পুলিশের মনোবল ফিরিয়ে পূর্বের ন্যায় আবারও কাজে উদ্বুদ্ধ করতে নানা উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ।ইতোমধ্যে পুলিশ সক্রিয় ভূমিকায় মাঠে কাজ করছেন।ফ্যাসিস্ট সরকারের কারণে পুলিশের নেতৃত্ব স্তর ভেঙে পড়ে, জন–আস্থা থেকে পুলিশ ছিটকে পড়েছিল।এখন চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, জনগণের কাছে পুলিশকে গ্রহণযোগ্য করে তোলা।সেই ধারাবাহিকতায় কাজ করছেন বাংলাদেশ পুলিশ।
গত ৭ সেপ্টেম্বর রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের ৩২ তম পুলিশ কমিশনার হিসাবে যোগদান করেন মোহাম্মদ আবু সুফিয়ান।যোগদানের পর থেকে সফলভাবে চুরি, ছিনতাই, মাদক, অস্ত্রসহ বিভিন্ন অপরাধ দমনে কাজ করছেন তিনি।এরই ধারাবাহিকতায় ইতোমধ্যে সাইবার ইউনিটের সহায়তায় হারানো মোবাইল উদ্ধার, নিয়মিত অভিযান পরিচালনা ও অপরাধী গ্রেফতার, অসামাজিক কাজে লিপ্ত আবাসিক হোটেলে অভিযান, জুয়াড়ি, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিদের আটক, অস্ত্র উদ্ধার, দূস্থদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ, বিধ্বস্ত থানা মেরামত, চাঁদাবাজ আটক, বীর পুলিশ মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা প্রদান, মানসিক ভারসাম্যহীন নারী উদ্ধার, ব্যাপক মাদক উদ্ধার, হারিয়ে যাওয়া শিশু উদ্ধার, জাল টাকা উদ্ধার, সাজা প্রাপ্ত আসামী আটক, চোরাই মোটরসাইকেল উদ্ধার, সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টি লক্ষ্য বিভিন্ন পেশাজীবীদের সঙ্গে মতবিনিময়, বিস্ফোরক মামলার আসামী গ্রেফতার, ক্লাস ফাঁকি দেওয়া ছাত্রদের আটক পূর্বক অভিভাবকের জিম্মায় প্রদান, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মিথ্যা তথ্য প্রচারকারীকে আটক, সুষ্ঠু ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় নানা উদ্যোগ গ্রহণ, ছিনতাইকারী আটকসহ বিভিন্ন অপরাধে অপরাধী ও সামাজিক কাজ করছেন আরএমপি পুলিশ।
বিধ্বস্ত সাইবার অপরাধ দমন ইউনিটটি অপরাধ দমনে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে।ইউনিটটি (আরএমপি) রাজশাহীর গোয়েন্দা শাখাসহ সকল থানা থেকে প্রাপ্ত মামলা, অভিযোগ, সাধারণ ডায়েরি (জিডি), হারোনো মোবাইল উদ্ধার, সোশ্যাল মিডিয়া ফেক আইডি ব্যবহারের মাধ্যমে অপপ্রচার, পর্নোগ্রাফি এবং মোবাইল ব্যাংকিং’র মাধ্যমে সংঘটিত অপরাধের তদন্ত কার্যক্রমে সহায়তা করছে।
জননিরাপত্তায় আরএমপি পুলিশের ভুমিকা ও কার্যক্রম নিয়ে কথা বললে এডিসি (মিডিয়া) সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, ডিআইজি মোহাম্মদ আবু সুফিয়ান গত ০৭ সেপ্টেম্বর রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার হিসেবে করেন।পুলিশ কমিশনার আরএমপিতে যোগদানের পর শহরে শারদীয় দুর্গাপূজা, যিশু খ্রিস্টের জন্মদিন (বড়দিন) এবং ইংরেজি নববর্ষের মতো তিনটি গুরুত্বপূর্ণ উৎসব অত্যন্ত সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে উদযাপিত হয়েছে।তিনি যোগাদানের পর পুলিশের মনোবল বৃদ্ধি ও পুলিশী র্কাযক্রম গতিশীলতা আনায়নে আরএমপি’র সকল ইউনিট পরির্দশন করেন এবং পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।এছাড়াও রাজশাহী মহানগর এলাকায় ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ঘটনার তথ্য দিয়ে সহায়তা করার জন্য তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।পুলিশি সেবা নগরবাসীর দৌরগোড়ায় পৌঁছে দিতে এবং যেকোনো তথ্য ও সেবা পেতে আরএমপিতে তিনি তথ্য ও সেবা কেন্দ্র চালু করেন।রাজশাহী মহানগরীতে সুষ্ঠু ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় নানাবিধ উদ্যোগ গ্রহণ ও যানজট নিরসন ও র্দুঘটনা প্রতিরোধে চালক ও মালিকদের নিয়ে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) সচেতনতামূলক র্কমশালার আয়োজন করেন।এছাড়াও তিনি রাজশাহীর সিনিয়র সিটিজেন ফোরাম ও সাহেব বাজার কেন্দ্রিক র্মাকেটসমূহের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করেন।তিনি সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে ক্লাস ফাঁকি দিয়ে র্পাকে আড্ডা দেওয়া শির্ক্ষাথীদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে আটকের পর সচেতন করা এবং এর কুফল সর্ম্পকে ধারণা দিয়ে ছেড়ে দেন।কিশোর গ্যাং ও কিশোর অপরাধ প্রতিরোধে গণসচেতনতা সৃষ্টি করতে এবং সমাজ থেকে অপরাধ ভীতি দূরীকরণর্পূবক জনমনে স্বস্তি ও আস্থা স্থাপন করতে বিট পুলিশিং র্কমসূচী জোরদার করেন।এছাড়াও অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে কয়েকজনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।অসামাজিক র্কাযক্রম রোধকল্পে সাংবাদিকসহ নগরীর সচেতন ব্যক্তিদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ কমিশনারের র্নিদেশে বিভিন্ন আবাসিক হোটেলে নিয়মিত অভিযান পরিচালিত হচ্ছে।
মাদকের বিরুদ্ধে তিনি শক্ত অবস্থান গড়ে তোলেন এবং রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ মাদকবিরোধী সাইকেল স্ট্যান্টশোর আয়োজন করেন।
তিনি ৫ আগস্ট রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের ক্ষতিগ্রস্ত ইউনিট সমূহের সংস্কার পরর্বতী অপারেশনাল র্কাযক্রমের জন্য আরএমপি ডিবি অফিস, ট্রাফিক অফিস চালু করেন এবং রাজপাড়া থানার নতুন ভবন উদ্বোধন করেন।প্রচণ্ড শীতের প্রকোপ থেকে নগরীর অসহায় দরিদ্র শীর্তাথদের মাঝে কম্বল বিতরণ করেন।তিনি নগরীর বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে মতবিনিময় করে তাদের মতামত গ্রহণ করেন এবং বড় তিনটি উৎসবগুলো নির্বিঘ্নে উদযাপন নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।এর ফলে কোনো ধরনের অপ্রতিকর ঘটনা ছাড়াই শান্তিপূর্ণ পরিবেশে উৎসবগুলো উদযাপন সম্ভব হয়েছে।এ ধরনের উদ্যোগ নগরবাসীর মধ্যে পুলিশের প্রতি ইতিবাচক ধারণা তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
এছাড়াও, পুলিশ কমিশনার তরুণ প্রজন্মকে মাদক, ইভটিজিং, সাইবার অপরাধ, ট্রাফিক আইন এবং কিশোর অপরাধের বিষয়ে সচেতন করতে স্কুল ভিজিটিং কর্মসূচি চালু করেন।এই কর্মসূচির মাধ্যমে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি পায়, যা একটি নিরাপদ ও সুন্দর সমাজ গঠনে সহায়ক হয়েছে।পুলিশ কমিশনারের এই প্রচেষ্টা সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনার একটি প্রশংসনীয় উদাহরণ।