নাশিদ নিকিতা,জন্ম যশোরে। বাবা আক্তারুজ্জামান ছিলেন একজন ব্যবসায়ী ও মা চমনা জামান গৃহীনি। দুই ভাই-বোনের মধ্যে নিকিতা ছোট। স্বামী আইটি ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক আলম আন্তকে নিয়েই এখন নিকিতার পরিবার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ ও এমবিএ শেষ করেছেন। পড়াশোনা শেষ করেই পেয়েছেন ঢাকার একটি প্রসিদ্ধ ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিতে চাকরি। বর্তমানে তিনি ঢাকার ধানমন্ডিতে থাকেন। পাশাপাশি শুরু করে অনলাইন ব্যবসা।
চাকরি, ব্যক্তিগত জীবন সব কিছু মিলিয়ে দিব্যি কেটে যাচ্ছিল নিকিতার। একদিন জয়েন হলেন ফেসবুক ভিত্তিক ই-কমার্স গ্রুপ উইমেন্স অ্যান্ড ই-কমার্স ফোরাম 'উইতে' । সেখানে দেখলেন এখানে অন্য এক দুনিয়া। যেন উদ্যোক্তাদের মেলা। গ্রুপের সবার পোস্ট পড়তে পড়তে তিনি বুঝতে শুরু করলেন। মনের মধ্যে কোথাও যেন একটা আশার আলো উঁকি-ঝুঁকি দিতে থাকলো। সেই আশাই যেন তাকে বলল, ‘তুমিও পারবে’।
কিন্তু নিকিতার এতো সময় কোথায়? এসব অনেক ঝামেলার কাজ। তিনি কি পারবেন? নিকিতা অবশ্য হুজুগে বাঙালি টাইপের নন। কিছু দেখলেন আর নিজেই শুরু করে দিলেন, এসব তার দ্বারা হবে না। তিনি অনেক প্রাকটিক্যাল চিন্তা করেন। এরপর নিজের মতো একটি প্ল্যান সেট করলেন।
কী কী সমস্যা আসতে পারে, তার তালিকা করলেন। সময়ও ভাগ করে নিলেন। এরপর এলো ইনভেস্টমেন্টের পালা। সিদ্ধান্ত নিলেন, কম টাকা ইনভেস্ট করবেন। সবার রেসপন্স দেখবেন। বাকিটা অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নেবেন। এভাবেই পথচলা শুরু নাশিদ নিকিতার। এভাবেই মাত্র ৮ মাসে সফলতার দেখা পেয়েছেন তিনি।
জুন মাসের ৬ তারিখে কারিগর খুঁজে মাত্র ৮ হাজার টাকার অল্প কয়েকটি শাড়ি বানিয়ে আনলেন। সাথে সাথে খুলে ফেললেন ফেসবুক পেজ ‘কাব্য কন্যা’। কিন্তু এ শাড়ি প্রমোট করবেন কিভাবে? এতো বিক্রেতার ভিড়ে তাকে তো কেউই চেনে না। তিনি ঠিক করলেন, তার ব্রান্ডিং নিজেই করবেন। নিজের শাড়ির মডেল নিজেই হবেন।
কিন্তু সারাদিন অফিস করে অনেক ক্লান্ত থাকতেন নিকিতা। তবুও রাত জেগে শাড়ি পরে পরে ফটোশুট করতেন। কারণ এ ছাড়া সময় বের করতে পারছিলেন না তিনি। অফিস যে দুদিন অফ থাকে; সেই দুদিন কারিগরদের পেমেন্ট, হিসাব, নতুন শাড়ি স্টক করতেই পার হয়ে যায় তার।
নিকিতার পরিবার তাকে সব সময় সব কাজে সাপোর্ট দিয়ে গেছে। কোনো কিছুতে না করেনি। আরও উৎসাহ দিয়ে গেছে। নিকিতা গ্রুপে যেদিন প্রথম শাড়ির ছবি পোস্ট করলেন; সেদিন থেকেই এত এত রেসপন্স এলো যে, ৮ হাজার টাকার শাড়িগুলো ২ দিনেই শেষ হয়ে গেল। নিকিতার মনে হচ্ছিল, স্বপ্ন দেখছেন কোনো।
এরপরও অর্ডার আসতে থাকলো কিন্তু শাড়ি তো সব শেষ। সেল করার সব টাকা দিয়ে সাথে আরও কিছু টাকা যোগ করে এবার বেশি করে শাড়ি বানিয়ে আনলেন। গ্রুপে আবার পোস্ট দিলেন। আবার সেই অর্ডারের ঝড়। শুরু হলো কাস্টমারদের একটার পর একটা ভালো ভালো রিভিউ। আবার অনেকগুলো শাড়ির অর্ডার পেলেন। এভাবে প্রতিদিনই অর্ডার আসতে থাকল। তিনি বুঝলেন, এভাবে কষ্ট করে লেগে থাকলে সবাই আস্তে আস্তে চিনবেন।
সেই থেকে শুরু হলো নিকিতার অ্যাক্টিভ থাকা। অন্যদিকে অর্ডার নেওয়া, শাড়ি স্টক করা, ডেলিভারি, কুরিয়ার এসবের প্রেসার তো আছেই। এভাবে আস্তে আস্তে সেল বাড়তে থাকে। প্রথম ২০ দিনে মোট ১ লাখ টাকার শাড়ি সেল হয়ে যায়। এতে তিনি পরিশ্রম বাড়িয়ে দিলেন, আরও শাড়ি আনলেন। বর্তমানে ৮ মাস পর এসে সেল আপডেট দাঁড়িয়েছে প্রায় ২০ লাখ টাকা। এ ৮ মাসে প্রায় ২০ লাখ টাকার উপরে শাড়ি বিক্রি করেছেন তিনি।
নাশিদ নিকিতা বলেন, ‘সত্যি বলতে, আমার অনেক অনেক কষ্ট করতে হয়েছে এ পর্যন্ত আসতে। কে কী বলল, কে কী করল, কার কত সেল হলো—এগুলো নিয়ে বিন্দুমাত্র ভাবিনি। উই গ্রুপে ফোকাস ছিল আমার ব্র্যান্ডিং, আমার শাড়ি, আমার নিজের পরিচিতি তৈরি করা নিয়ে। চাইলেই স্বপ্ন পূরণ করা যায়, লাগবে শুধু ধৈর্য আর কাজের প্রতি একাগ্রতা।’
নিকিতা আরও বলেন, 'বর্তমানে আমার শাড়ি গুলো লন্ডন, নিউইয়র্ক, সুইডেন ইতালি, কানাডাসহ ছয়টি দেশে গেছে। এখনও নিয়মিত যাচ্ছে। প্রতি মাসে প্রায় তিন লাখ টাকার শাড়ি বিক্রি হয়। এখন কাজে আমার দায়িত্ববোধ আরও বেড়ে গেছে। আমাকে খুব সুক্ষভাবে কাজ করে বিদেশি ক্রেতাদের মন রক্ষা করতে হয়। যেনো তারা আমার দেশের শাড়ি সম্পর্কে ভুল ধারনা না নেয়। আমিও সর্বোচ্চ চেস্টা দিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। আপনারা সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন।
সাজেদুর আবেদীন শান্ত
ফিচার লেখক ও গণমাধ্যমকর্মী