প্রতিদিনের বাংলাদেশ।। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে ১৪ এপ্রিল থেকে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত ‘সর্বাত্মক লকডাউনে’ কাজ ও চলাচলে কঠোর বিধিনিষেধ জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার অনুমোদনের পর আজ সোমবার এ বিষয়ে আদেশ জারি করা হয়।
এতে সরকারি-বেসরকারি অফিস এবং গণপরিবহন বন্ধ রাখাসহ ১৩ দফা নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তবে শিল্প কারখানাগুলো স্বাস্থ্যবিধি মেনে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় চালু থাকবে।
যা খোলা থাকবে
বিমান, সমুদ্র ও স্থলবন্দর এবং তৎসংশ্লিষ্ট অফিস খোলা থাকবে।
শিল্প-কারখানা স্বাস্থ্যবিধি মেনে নিজ ব্যবস্থাপনায় চালু থাকবে। তবে শ্রমিকদের আনা-নেয়ায় প্রতিষ্ঠানকে পরিবহন ব্যবস্থা করতে হবে।
সুপ্রিম কোর্ট খোলা থাকবে অনলাইনে কাজ হবে। আর অন্য আদালত খোলা নাকি বন্ধ থাকবে তা জানাবে সুপ্রিম কোর্ট।
পণ্য পরিবহন, উৎপাদন ব্যবস্থা ও জরুরি সেবাসমূহ খোলা থাকবে।
আইনশৃঙ্খলা ও জরুরি পরিষেবা খোলা থাকবে। এসবের মধ্যে রয়েছে- কৃষি উপকরণ (সার, বীজ, কীটনাশক, কৃষি যন্ত্রপাতি ইত্যাদি) খাদ্যশস্য ও খাদ্য দ্রব্য পরিবহন, ত্রাণ বিতরণ, স্বাস্থ্যসেবা, কোভিড-১৯ টিকা প্রদান, বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস, জ্বালানি, ফায়ার সার্ভিস, স্থলবন্দর, নৌবন্দর ও সমুদ্র বন্দরের কার্যক্রম, টেলিফোন ও ইন্টারনেট (সরকারি-বেসরকারি), গণমাধ্যম (প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া), বেসরকারি নিরাপত্তাব্যবস্থা, ডাকসেবাসহ অন্যান্য জরুরি ও অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ও সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অফিস, তাদের কর্মচারী ও যানবাহন এ নিষেধাজ্ঞার বাইরে থাকবে।
অতি জরুরী প্রয়োজন ছাড়া যেমন- ওষুধ ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য কেনা, চিকিৎসাসেবা, মৃতদেহ দাফন বা সৎকারে বাড়ির বের হওয়া যাবে।
টিকা কার্ড তাকলে টিকাগ্রহণের জন্য যাওয়া যাবে।
খাবারের দোকান ও হোটেল-রেস্তোরাঁয় দুপুর ১২টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা এবং রাত ১২টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত শুধুমাত্র বিক্রি বা সরবরাহ (online/ Takeway) করা যাবে। ০৮. কাঁচা বাজার এবং নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত উন্মুক্ত স্থানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্রয়-বিক্রয় করা যাবে। বাজার কর্তৃপক্ষ স্থানীয় প্রশাসন বিষয়টি নিশ্চিত করবে।
বোরো ধান কাটার জরুরি প্রয়োজনে কৃষিশ্রমিক পরিবহনের করা যাবে।
বন্ধ থাকছে যেসব
সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি অফিস, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। তবে এসব প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্মস্থলে অবস্থান করতে হবে।
সব ধরনের পরিবহন, সড়ক, নৌ, রেলপথ, অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বন্ধ থাকবে।
শপিং মলসহ অন্য সব দোকান বন্ধ থাকবে।
এর আগে করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় গত ৫ এপ্রিল থেকে ৭ দিনের জন্য গণপরিবহন বন্ধসহ মানুষের চলাচল নিয়ন্ত্রণে ১১ দফা কঠোর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল সরকার। দুদিন পরে সে সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে সকাল-সন্ধ্যা গণপরিবহন চলার অনুমতি দেওয়া হয়। এর একদিন পর খুলে দেওয়া হয় শপিংমলও। এতে সরকারের সিদ্ধান্তহীনতা নিয়ে সমালোচনা করেন বিশেষজ্ঞরা।
এরই মধ্যে করোনায় সংক্রমণ ও মৃত্যু দুটোই বাড়তে থাকে। প্রতিদিন মৃত্যু ও সংক্রমণের নতুন রেকর্ড হচ্ছে দেশে। এ পরিস্থিতিতে জাতীয় সংসদে দেওয়া বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন ‘প্রয়োজনে আরও কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে পারে সরকার’।
এরপর গত ৯ এপ্রিল সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ১৪ এপ্রিল থেকে ‘কঠোর ও সর্বাত্মক লকডাউন’ দেওয়া হবে বলে ঘোষণা দেন। পরে জনপ্রশাসন মন্ত্রীও একই ইঙ্গিত দেন। এরই ধারাবাহিকতায় আজ ১২ এপ্রিল ১৩ দফা নির্দেশনা দিয়ে ১৪ এপ্রিল থেকে ৮ দিনের জন্য নতুন বিধিনিষেধ আরোপ করল সরকার। সরকারি ভাষায় এটি ‘বিধিনিষেধ’ হলেও গত বছরের লকডাউনের সময় দেওয়া নির্দেশনার সঙ্গে এর মিল রয়েছে।
এদিকে কারখানা মালিকদের চাপে এবারের বিধিনেষেধেও পোশাক কারখানা চালু রাখা হবে বলে জানানো হয়েছে।