আবু বকর ছিদ্দিক সোনাইমুড়ী নোয়াখালীঃ ১৯৭১ সালের ২৬ মে নোয়াখালী জেলার সোনাইমুড়ি উপজেলার সোনাইমুড়ি আলোকপাড়া,বাট্টা, নাওতলা, বিজয়নগর ও কেশারপাড় এই গ্রামে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে এক জঘন্যতম নির্মম মর্মান্তিক নৃশংস গণহত্যা পরিচালনা করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীরা।
১৯৭১ সালে সোনাইমুড়ি ছিল একটি ইউনিয়ন এবং সোনাইমুড়ি ছিল একটি গ্রাম বড়বাজার।
জানা যায়, ১৯৭১ সালের ২৬ মে নোয়াখালীর এ জোনের কমান্ডার সুবেদার লুৎফুর রহমানের নির্দেশে সুবেদার ওয়ালি উল্লাহ, সুবেদার শামসুল হক ও মমিনুল ইসলাম বাকেরের নেতৃত্বে একদল মুক্তিবাহিনী যাদের অধিকাংশই ছিলেন সশস্ত্র বাহিনী থেকে পালিয়ে আসা ও অবসরপ্রাপ্ত অভিজ্ঞ ও দক্ষ সৈনিক। তারা সোনাইমুড়ি বাজারের দক্ষিনে দেওয়ানজী হাটের রেলওয়ে পুলের কাছে হানাদার বাহিনীর উপর আক্রমণ করার জন্য ঐ দিন ওঁত পেতে থাকে।
কুমিল্লা সেনানিবাস থেকে লাকসাম হয়ে পাক হানাদার বাহিনীর একটি গাড়ী বহর মুক্তি বাহিনীর উৎপেতে থাকা স্থান অতিক্রম করার সময় মুক্তি বাহিনীর দল একসাথে গর্জে ওঠে এবং মুক্তি বাহিনী তাদেরকে লক্ষ্য করে গুলি করলে ঘটনাস্থলেই পাক বাহিনীর একজন মেজর, একজন ক্যাপ্টেন সহ ৪ জন সিপাহী নিহত হয়। তারপর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী চরম উত্তেজিত হয়ে পায় শতাধিক সৈন্য ও আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র ও গাড়ীর বহর নিয়ে সোনাইমুড়ি আলোক পাড়া, নাওতলা, বাট্টা, কেশার পার ও বিজয়নগর গ্রামে ঢুকে ঘরে ঘরে আগুন জ্বালিয়ে নিরীহ মা বোনদের উপর ধর্ষণ, হত্যা, গণহত্যা অভিযান পরিচালনা করে। সোনাইমুড়িতে সেই দিনের নির্মম গণহত্যায় ১২৬ জন নিরীহ মানুষ শহীদ হন। অনুসন্ধান করে জানা যায়, আলোকপাড়া, বাট্টা, সোনাইমুড়ি, নাওতলা, বিজয় নগর ও কেশারপাড় গ্রামের ২৮ জন শহীদের পরিচয় পাওয়া সম্ভব হয়েছে।
বধ্যভূমিতে শহীদ হওয়া যে ২৮ জন নাম ঠিকানা সংগ্রহ করেছেন মুক্তিযোদ্ধা ও এলাকাবাসী, তারা হচ্ছেন সেরাজ উদ্দিন, আব্দুল কাইয়ুম, আব্দুল মালেক, বন্দে আলী দর্জি, মজুমিয়া, আব্দুল গোফরান, মোঃ হানিফ, রফিক উল্লাহ, আব্দুল করিম, ফজল করিম, আব্দুল গোফরান, হাজী দেলু,আব্দুল হাকিম, আব্দুল কাইয়ুম, মিন্টু রঞ্জন সাহা, রায় মোহন সাহা, কুঞ্জ মোহন সাহা, সুধাংশু রঞ্জন সাহা, গারিবালা সাহা, হরি বল্লভ চ্যাটার্জী, নির্মলা চ্যটার্জী,কুঞ্জ মোহন সাহা, তপন চ্যটার্জী, যুগন্ধে চক্রবর্তী, ওমিও বালা চক্রবর্তী, ময়ন চন্দ্র সাহা, সুবল চন্দ্র সাহা, বরকুনীর জামাই,
স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা ও এলাকাবাসীর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সোনাইমুড়ি আলোক পাড়া পোদ্দার বাড়িতে বধ্যভৃমিটি স্থায়ীভাবে ভাবে সংরক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছে। ২৯ মে সোমবার বিকেল ৫ টার দিকে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত থেকে বধ্যভূমি সংরক্ষণ, ৭১ ভিত্তিপ্রস্তর আনুষ্ঠানিকভাবে স্থাপন করেন।স্থানীয় সাংসদ এইচ এম ইব্রাহিম এমপি।
মুক্তিযোদ্ধা মমিনুল ইসলাম বাকেরের সভাপতিত্বে, বক্তব্য রাখেন, সোনাইমুড়ি পৌরসভার মেয়র নুরুল হক চৌধুরী, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইসমাইল হোসেন, সোনাইমুড়ি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক বাবু মনিদ্র কুমার মজুমদার, সোনাইমুড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক আ প ম বাবুল বাবু, অঞ্জন কুমার সাহা, জেলা পরিষদের সদস্য মাহফুজুর রহমান বাহার, এছাড়াও, আরো উপস্থিত ছিলেন, সোনাইমুড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জিয়াউল হক, বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের উর্ধতন কর্মকর্তা- কর্মচারী, বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ পরিবারের সদস্য সহ পৌরসভার কাউন্সিলর সহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।