তোফায়েল আহমেদ রাহি।। করোনা সংক্রমণ রোধে সারাদেশে সর্বাত্মক লকডাউন চলছে। চলমান এ লকডাউনে গণপরিবহন ছাড়া প্রায় সব ধরনের গাড়ি সড়কে চলতে দেখা গেছে। গত কয়েকদিনে পুলিশের চেকপোস্টে কড়াকড়ি দেখা গেলেও আজ দেখা গেছে তার উল্টো চিত্র। রাজধানীর কোনও কোনও সড়কে যানবাহনের অতিরিক্ত চাপও দেখা গেছে। ফুটপাতেও বেড়েছে সাধারণ মানুষের চলাচল।
আজ সকাল থেকে কাকরাইল, বিজয় নগর, রামপুরা, মালিবাগ, শান্তিনগরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে এমন দৃশ্যই। তবে সরকারি নির্দেশনা মেনে বন্ধ রয়েছে শপিংমল-বিপণী বিতানগুলো। কাঁচাবাজার সংলগ্ন দোকান-পাট ছাড়া বন্ধ রয়েছে অন্যান্য দোকানপাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও।
সকাল সাড়ে ১০টায় কাকরাইলের নাইটিঙ্গেল মোড়ে পুলিশের তল্লাশি চৌকির সামনে ব্যক্তিগত গাড়ির লম্বা লাইন দেখা গেছে। প্রতিটি যানবাহন থামিয়ে ‘মুভমেন্ট পাস’ দেখতে চান পুলিশ সদস্যরা। যাদের পাস নেই তাদেরকে জরিমানা করে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। নাইটিঙ্গেল মোড়ে উল্টে রাখা দুটি রিকশাও রাখা ছিল।
সেখানে পুলিশ সদস্য জানান, লকডাউনে রাস্তায় বের হওয়া নিষেধ। সেজন্য প্রতীকী শাস্তির এই ব্যবস্থা।
উল্টে রাখা একটি রিকশার চালক কালাম বলেন, “স্যার, রামপুরা থেকে এক আপা মতিঝিল যাবেন, তাকে নিয়ে এসেছি। উনার যে পাস নাই আমি তো আর জানি না।”
বিভিন্ন সড়কের মোড়ে মোড়ে পুলিশের চৌকি বসানো হয়েছে। বিভিন্ন অলি-গলির গেইটও বন্ধ রাখা হয়েছে।
শান্তিনগর বাজারের সামনে হ্যান্ডমাইকে ক্রেতাদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে বাজার করার দ্রুত বাসায় চলে যেতে বলা হচ্ছে।
লকডাউনের প্রথম দিন গত ১৪ এপ্রিল ঢাকা শহর বলতে গেলে একরকম ফাঁকা ছিল। প্রথম দিন কড়াকড়ি থাকলেও দ্বিতীয় দিন থেকে ঢাকার রাস্তা-ঘাটের চিত্র পাল্টাতে থাকে; অল্প সংখ্যায় রিকশা রাস্তায় নামে। ষষ্ঠ দিনে এসে দেখা যাচ্ছে, এই সংখ্যা এখন অনেক বেড়েছে।
কয়েকজন রিকশাচালকের সাথে কথা বলে জানা যায়, রিকশার সংখ্যা বাড়লেও তাদের রোজগার বাড়েনি।
শান্তিনগরে রিকশাচালক রফিক বলেন, “পেটের জন্য সকাল ৭টায় রিকশা নিয়া নামছি। এখন বাজে ১০টা। দুইটা খ্যাপ পাইছি। দেখেন স্যার, অনেক রিকশা মোড়ে মোড়ে আছে, প্যাসেঞ্জার নাই।”
লকডাউনের এমন ঢিলেঢালা পরিস্থিতিতে হতাশা প্রকাশ করেছেন নয়া পল্টনের বাসিন্দা হাফিজুর রহমান।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের এই চাকুরে বলেন, “যেভাবে রাস্তায় মানুষজনের উপস্থিতি বাড়ছে, রাস্তায় রিকশা-যানবাহনের সংখ্যা বাড়ছে- এটাকে কি লকডাউন বলা যায়? এরকম হলে সংক্রমণ কমবে কিভাবে?
“আপনি দেখেন, লকডাউনের প্রথম দিন যেমন ছিল ঢাকার দৃশ্য, আজকে সেরকম দৃশ্য নেই। এখন কড়াকড়ি নেই, ঢিলেঢালা অবস্থা। মানুষের মধ্যে অসচেতনতা জেঁকে বসে আছে। রাস্তা-ঘাটের চিত্র দেখে মনে হচ্ছে যে, করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিয়ে আমাদের কোনো দুশ্চিন্তা নেই।”
তবে লকডাউনের কারণে বিপাকে থাকার কথা জানিয়েছেন সেগুনবাগিচা এলাকার কাপড়ের দোকানি তাইফুল ইসলাম।
তিনি বলেন, “কাঁচাবাজারের কাছে সব দোকানপাট সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত খোলা রাখা হয়েছে। অথচ আমরা দোকান খুললেই পুলিশ এসে বন্ধ করতে বলে। ছোট পুঁজি নিয়ে কাপড়ের দোকান দিয়েছি। এখন কোনো ব্যবসা নেই, কী খাবো, কিভাবে চলব?”
করোনা ভাইরাসের উর্ধবমুখী সংক্রামণের প্রেক্ষাপটে গত ১৪ এপ্রিল সকাল থেকে কঠোর বিধি নিষেধ চালু করে সরকার। এই বিধি নিষেধকে ‘সর্বাত্মক লকডাউন’ বলা হচ্ছে। এই নিষেধাজ্ঞার সময় ২১ এপ্রিল রাত ১২টা পর্যন্ত।
তবে পোশাক রপ্তানি প্রতিষ্ঠানসহ শিল্প-কলকারখানা খোলা রাখা হয়েছে। ১৫ এপ্রিল সকাল ১০টা থেকে সীমিত পরিসরে চলছে বাণিজ্যিক ব্যাংক ও পুঁজিবাজারের কার্য্ক্রম।