রক্ত-ঋণ
শমিত কুমার লাহিড়ী
একাত্তরের পঁচিশে মার্চ,
রাতের অন্ধকারে,
হানাদার সব হ’লো জড়ো
ঢাকার সে নগরে ।
তিরিশ লক্ষ বাঙালিকে
হত্যা করতে হাজির,
অপারেশন ‘সার্চ-লাইট’ সে,
ইতিহাসের নজির ।
ইয়াহিয়া খান নেতা তার,
“ধরো এবং মারো,
বাঙালি সব চাটবে যে পা,
যদি এমন করো ।”
‘জগন্নাথ হল’ হ’লো ধ্বংস,
সাতশো ছাত্র শহীদ ।
এইভাবেই সে ভাঙবে বুঝি
আওয়ামী লীগের ভিত !
আঁধার রাতেই হানা দিলো
পাকিস্তানি সেনা ।
হাজার ছাত্র-শিক্ষক শুধলো
বাংলাভাষার দেনা ।
বাদ গেল না বুদ্ধিজীবী,
পুলিশ, ই.পি.আর !
তবু তাদের মানতে হ’লো
বাঙলার কাছে যে হার ।
নয় মাসের সেই ভীষণ লড়াই,
যেদিন হ’লো সব শেষ,
সেই দিন আবার জন্ম নিল
‘স্বাধীন’ বাংলা এই দেশ ।
ডিসেম্বরের ষোল তারিখ,
পবিত্র এই দিনে
‘বিজয় দিবস’ পেল ‘বাংলা’
লাখো রক্তের ঋণে ।
বাংলাদেশ ‘মা’ বাংলাদেশীর,
নাড়ীর সাথে সংযোগ ।
ভুলিনি মা সেই অত্যাচার,
কালো রাতের দুর্যোগ ।
বাপ-দাদাদের সেই আত্মত্যাগ,
লাখো রক্তের ঋণ-টা,
স্মরণ ক’রে আজও ভাবি
যুদ্ধের রাত আর দিনটা ।
প্রণাম জানাই লাখো শহীদ,
তোমাদের-ই পায়ে ।
তোমাদের সব রক্ত বইছে
আমাদের যে গায়ে ।
বাংলাদেশের বিজয় কেতন
সদাই উঁচু রাখবো ।
করছি শপথ সবাই আমরা
মিলেমিশেই থাকবো ।
শত্রু এলে একজোটে সব
ধ’রবো চুলের মুঠি,
দু’হাত দিয়ে ছিঁড়বো তাদের
একটা একটা টুঁটি ।
আসবে না আর, কথা দিলাম,
এমনতর সে দিন ।
ভুলবো না গো কোনো দিনও
বীর শহীদদের সে ঋণ ।