ঢাকাবুধবার , ৭ জুলাই ২০২১
  1. Covid-19
  2. অপরাধ ও আদালত
  3. অর্থনীতি
  4. আন্তর্জাতিক
  5. ইসলাম ডেস্ক
  6. কৃষি ও অর্থনীতি
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয়
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. দেশজুড়ে
  11. নির্বাচন
  12. বানিজ্য
  13. বিনোদন
  14. ভিডিও গ্যালারী
  15. মুক্ত মতামত ও বিবিধ কথা
আজকের সর্বশেষ সবখবর

ভোট এলেই শরিকদের কদর বাড়ে

প্রতিবেদক
প্রতিদিনের বাংলাদেশ
জুলাই ৭, ২০২১ ১০:৫৯ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

নিজস্ব প্রতিনিধি | ভোট নেই, তাই কদরও নেই আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট শরিকদের। কদর নেই তাদের রাজনীতির মাঠেও। মাঠের রাজনীতিতে খুব একটা সুবিধা করতে পারছে না বিএনপিসহ দলটির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট।

তাই তাদের রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলায়ও মাঠে নামতে হচ্ছে না ১৪ দলীয় জোটকেও। এই সুযোগে ‘একলা চলো’ নীতিতে হাঁটছে শাসকদল আওয়ামী লীগ। আর এতেই ক্ষোভ, অসন্তোষ এবং হতাশাও বাড়ছে শরিকদের। ক্ষমতাসীনদের সমালোচনায় প্রকাশ্যে মুখ খুলতে শুরু করেছেন শরিক দলের শীর্ষ নেতারা। যার বহির্প্রকাশ ঘটেছে সংসদের ভেতর ও বাইরে।

সম্প্রতি ১৪ দলীয় জোটের অন্যতম প্রধান শরিক দল ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি সাবেক মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন এমপি অভিযোগ করে বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগ নিজেই রাজনৈতিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছে।

সামরিক-বেসামরিক আমলা ও অতি ধনী ছোট একটা গোষ্ঠীর ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে সরকার। এর ফলে লুটপাট-দুর্নীতি বেড়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ২০১৩-১৪ সাল পর্যন্ত ১৪ দল কার্যত সক্রিয় ছিল। এরপরই আস্তে আস্তে দিবসভিত্তিক কর্মসূচি নির্ভর হয়ে পড়েছে।

অন্যদিকে ১৪ দলীয় জোটের আরেক শরিক দল জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ সভাপতি ও সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু এমপি শাসক দল আওয়ামী লীগের ‘একলা চলো’ নীতিতে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, প্রশাসনের ভেতরে বিএনপি-জামায়াত-হেফাজত এখনো ঘাপটি মেরে আছে। এই তিন শক্তি মিলে প্রশাসনের ভেতরে একটি দুর্নীতিবাজ সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছে। যারা সরকারের উন্নয়নের সুফল খেয়ে ফেলছে।

সরকারদলীয় জোটের দুই শীর্ষ নেতার এই ঝাঁজালো বক্তব্যে তোলপাড় শুরু হয়। বিশেষ করে রাশেদ খান মেননের বক্তব্যে বেশ ক্ষুব্ধ আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা। তারা বলছেন, ‘না পাওয়ার বেদনা থেকে মেনন এসব বলছেন।’

যদিও ভেতরের খবর অন্য। ওয়ার্কার্স পার্টি অনেক দিন ধরেই সরকারের সমালোচনায় মুখর। সংসদে এবং সংসদের বাইরে সরকারের তীব্র সমালোচনা করেছেন রাশেদ খান মেনন। এমনকি তারা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ‘নৌকা’ বাদ দিয়ে দলীয় প্রতীক ‘হাতুড়ি’ মার্কা নিয়ে ভোট করারও সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ওয়ার্কার্স পার্টি ও জাসদ ছাড়াও বাংলাদেশ জাসদ, জাতীয় পার্টি (জেপি), তরিকত ফেডারেশন, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-ন্যাপ (মোজাফফর), গণতন্ত্রী পার্টি, গণআজাদী লীগ, সাম্যবাদী দলসহ জোটের শরিকরা কমবেশি সবাই ক্ষুব্ধ। সুযোগ পেলে তারা সেই ক্ষেভের বহির্প্রকাশও ঘটাচ্ছেন।

১৪ দলীয় জোটের সমন্বয়ক ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু। তিনি বলেন, শরিকদের মধ্যে কিছুটা ক্ষোভ আছে, তবে এটি থাকবে না। কারণ ১৪ দলীয় জোট একটি আদর্শিক জোট। করোনা মহামারির বাস্তবতায় আমরা রাজনৈতিক কর্মসূচি নিয়ে পথ চলতে পারছি না। তবে মহামারির এই বিপদ কেটে গেলে নিশ্চয়ই আমরা আবার বসে আগামী দিনের কর্মকৌশল ঠিক করব। অতীতের মতো আগামীতেও এক সঙ্গেই পথ চলব।

আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ২০০৪ সালে রাজনৈতিক জোট হিসাবে আবির্ভূত হয় ১৪ দলীয় জোট। ওই সময়কার ক্ষমতাসীন বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোটের বিপরীতে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য, আদর্শ এবং ২৩ দফা কর্মসূচির আলোকে পথ চলা শুরু করে এই জোট। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) এবং গণফোরাম প্রথমদিকে এই জোটে থাকলেও পরে তারা বেরিয়ে যায়।

এর পরেও আওয়ামী লীগকে সামনে রেখে বাকি দলগুলো নিয়ে ১৪ দলীয় জোটের পথ চলা অব্যাহত থাকে। ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগ মুহূর্তে জাতীয় পার্টির সঙ্গে ১৪ দলকে সম্পৃক্ত করে মহাজোট গঠন করে আওয়ামী লীগ এবং পরবর্তীতে জয়ী হয়ে সরকার সরকার গঠন করে। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৪ এবং ২০১৮ সালে টানা তৃতীয় মেয়াদের সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। প্রথম থেকেই ক্ষমতাসীন দলটির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে ১৪ দলীয় জোট হচ্ছে তাদের আদর্শভিত্তিক জোট। আর জাতীয় পার্টিকে সঙ্গে গঠিত মহাজোট হচ্ছে নির্বাচনি জোট।

সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের অবর্তমানে জাতীয় পার্টির কাণ্ডারি এখন তার ছোট ভাই জিএম কাদের। তিনি দলটির চেয়ারম্যান এবং জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় উপনেতা। জিএম কাদের পার্টি চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই বলে আসছেন, জাতীয় পার্টি সরকারে নেই। দলটি বিরোধী দলে আছে, বিরোধী দলের ভূমিকাই পালন করবে। সংসদে এবং সংসদের বাইরে জাতীয় পার্টি কার্যকর বিরোধী দলের ভূমিকাই পালন করে আসছে।

কিছু দিন যাবত সংসদ এবং সংসদের বাইরে ১৪ দলীয় জোটের শরিকরাও সরকারের সমালোচনায় মুখর। বিশেষ করে জোটের দুই প্রধান শরিক দল ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন এবং জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল- জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু আওয়ামী লীগ ভুল পথে হাঁটছে বলে অভিযোগ করে আসছেন। এই নেতা আওয়ামী লীগের মন্ত্রিসভায় না থাকলেও দুটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতির পদে আছেন। এ সত্ত্বেও সংসদে এবং সংসদের বাইরে শাসক দলের সমালোচনায় বেশ কিছু দিন ধরে মুখর তারা।

রাশেদ খান মেনন এবং হাসানুল হক ইনু-এই দুই নেতা স্পষ্ট করেই বলেছেন, রাজনৈতিক জোট হিসাবে ১৪ দলীয় জোটের গুরুত্ব এখনো রয়ে গেছে। কিন্তু আওয়ামী লীগের একলা চলো নীতি এবং সরকার পরিচালনায় শরিকদের মতামত উপেক্ষা করে আমলানির্ভরতা মূলত রাজনীতিটাকেই ক্ষতিগ্রস্ত করছে। উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রাও ব্যাহত হচ্ছে।

জানতে চাইলে এ প্রসঙ্গে রাশেদ খান মেনন বলেন, সরকার একটি গোষ্ঠীর কাছে প্রকারান্তরে জিম্মি হয়ে পড়েছে। যে কারণে অনিয়ম ও দুর্নীতি মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। তিনি আরও বলেন, অর্থ পাচার বাড়ছে। দেশে নানামুখী উন্নয়নযজ্ঞ অব্যাহত থাকা সত্ত্বেও ব্যাংকিং খাত, শেয়ারবাজারসহ আর্থিক খাতের অব্যবস্থাপনা ফুটে উঠছে। স্বাস্থ্য খাতের বেহাল তো আর কারও অজানা না। প্রবীণ এই রাজনীতিক বলেন, রাজনৈতিক সরকার যখন রাজনীতিকে প্রাধান্য না দিয়ে সামরিক-বেসামরিক আমলা এবং গোষ্ঠীনির্ভর হয়ে ওঠে তখন এই অব্যবস্থাগুলো প্রকট আকার ধারণ করে। তিনি বলেন, দুঃখের বিষয় হচ্ছে ১৪ দলীয় জোট একটি রাজনৈতিক জোট। চারদলীয় জোটের বিপরীতে শুরু থেকে সুনির্দিষ্ট আদর্শ, লক্ষ্য, উদ্দেশ্য এবং কর্মসূচির ভিত্তিতে এই জোট পথ চলেছে। এখন জোটের রাজনীতিটাই হারিয়ে গেছে।

অন্যদিকে দেশ পরিচালনায় আওয়ামী লীগের ‘একলা চলো’ নীতিতে অসন্তোষ প্রকাশ করে হাসানুল হক ইনু বলেন, রাজনৈতিক জোট হলেও ১৪ দলীয় জোট কার্যত এখন নিষ্ক্রিয়। জোটের কার্যক্রম দিবসভিত্তিক আলোচনা-সেমিনারেই সীমাবদ্ধ। তিনি বলেন, সরকার যদি একা চলতে চায়, তারা যদি মনে করে আর ১৪ দলীয় জোটের প্রয়োজনীয়তা নেই তাহলে ভিন্ন বিষয়। কিন্তু আমরা মনে করি, বিএনপি-জামায়াত-জঙ্গিবাদ-মৌলবাদ এবং হোফাজতকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করতে চাইলে ১৪ দলীয় জোটের প্রয়োজনীয়তা মানতেই হবে। এই জোটকে আরও শক্তিশালী করতে হবে।

দেশকে যদি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় এগিয়ে নিতে হয়, তাহলে এই জোটকে কার্যকর করা ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই। সাবেক এই তথ্যমন্ত্রী আরও বলেন, একদিকে দুর্নীতির ভাইরাস, আরেকদিকে করোনাভাইরাস, অন্যদিকে জামায়াত-জঙ্গি-হেফাজত ভাইরাস। এই তিন ভাইরাসকে মোকাবিলায় রাজনৈতিক ভূমিকা পালন করতে হবে, যা কেবল ১৪ দলীয় জোটকে কার্যকর করেই সম্ভব।

আপনার মন্তব্য লিখুন