হাটহাজারী (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি।। হাটহাজারীতে মুহাম্মদ ইয়াসিন ফরহাদ (৮) নামে এক মাদ্রাসাছাত্রকে নির্মমভাবে পিটিয়েছেন মাদ্রাসার হুজুর। পেটানোর ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।
হাটহাজারী পৌর এলাকার কনক কমিউনিটি সেন্টারের কাছে অবস্থিত মারকাজুল কুরআন ইসলামিক একাডেমিতে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনাটি জানাজানি হলে প্রশাসনের হস্তক্ষেপে মাদ্রাসার হুজুর হাফেজ মুহাম্মদ ইয়াহিয়াকে (২৬) আটক করে ছেড়ে দেওয়া হয়। হুজুরকে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ বহিষ্কার করলেও পিটুনির শিকার মাদ্রাসাছাত্রের পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো আইনি প্রতিকার না চেয়ে উল্টো লিখিতভাবে শিক্ষককে ছেড়ে দিতে প্রশাসনকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
জানা যায়, মারকাজুল কুরআন ইসলামিক একাডেমিতে ওই ছাত্র হেফজ বিভাগে চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ভর্তি হয়। মঙ্গলবার বিকেলে ওই ছাত্রের মা ছেলেকে দেখতে মাদ্রাসায় যান। বিকেল ৫টার দিকে চলে যাওয়ার সময় ছেলে মায়ের সাথে যেতে কান্নাকাটি করে। একপর্যায়ে ছেলে কান্না করতে করতে মায়ের পিছু নিয়ে মাদ্রাসা থেকে ২০০ মিটার দূরে চট্টগ্রাম-রাঙ্গামাটি মহাসড়কের কনক কমিউনিটি সেন্টারের সামনে যায়। এসময় হুজুর হাফেজ মুহাম্মদ ইয়াহিয়াও পিছু গিয়ে ছাত্র ফরহাদকে ধরে নিয়ে মাদ্রাসায় নিয়ে আসতে থাকে। ছাত্র আসতে না চাইলে তাকে টেনেহিঁচড়ে মাদ্রাসায় নিয়ে এসে বেত দিয়ে নির্মমভাবে পিটাতে থাকে। পেটানোর দৃশ্য সেখানকার এক স্কুলছাত্র মোবাইলে ধারণ করে। পরে ভিডিওটি ফেসবুকে পোস্ট করলে তা ভাইরাল হয়। বিষয়টি দেখে রাত দেড়টার দিকে হাটহাজারী ইউএনও রুহুল আমিন পুলিশ টিমসহ মাদ্রাসায় গিয়ে মাদ্রাসার হুজুরকে আটক করেন। এ সময় খবর দেওয়া হয় ছাত্র ফরহাদের পরিবারকে। পরে হুজুরকে ইউএনও’র কার্যালয়ে নেওয়া হয়।
মাদ্রাসার পরিচালক মাওলানা এমরান সিকদার বলেন, ঘটনার সময় আমি মাদ্রাসায় ছিলাম না। ছাত্রের মা মাদ্রাসায় তাকে দেখতে আসেন। চলে যাওয়ার সময় সে কান্না করে মায়ের পিছু নেয়। এক পর্যায়ে হুজুর তাকে টেনে-হিঁচড়ে মাদ্রাসায় এনে নির্মমভাবে পিটুনি দেন। বিষয়টি ভিডিওতে দেখে আমার চোখেও পানি আসে। আমাদের প্রতিষ্ঠান ২০১৮ সালের শেষের দিকে প্রতিষ্ঠিত। এখানে আগে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। এটিই প্রথম ঘটনা। ঘটনা জানার পরপরই আমি হুজুরকে বহিষ্কার করেছি। শিক্ষার্থীর পরিবার আইনি সহায়তা চাইলে আমি সহযোগিতা করবো।
শিক্ষার্থীর মা পারভীন আক্তার বলেন, ছেলেকে কোরআনের হাফেজ বানানোর জন্য মাদ্রাসায় দিয়েছি। সে আমার পিছু পিছু কান্না করতে করতে আসে। পরে হুজুর ধরে নিয়ে কী করেছে জানি না। রাতে ভিডিওতে যা দেখলাম তাতে হতবাক হয়েছি। আমরা কোনো মামলায় যেতে চাই না। হুজুর আমাদের কারণে বিপদে পড়ুক সেটাও চাই না। হুজুরের বিচার আল্লাহ করবেন। হুজুরকে ছেড়ে দিতে আমরা ইউএনও’কে লিখিতভাবে জানিয়েছি।
হাটহাজারীর ইউএনও রুহুল আমিন প্রতিদিনের বাংলাদেশ কে বলেন, আমরা হুজুরকে আটক করি। ছেলের পরিবারের পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ আশা করেছিলাম। উল্টো ছেলের পরিবার হুজুরকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য লিখিতভাবে অনুরোধ জানিয়েছে। তাই হুজুরের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া যায়নি। তাকে দেখতে বুধবার আমরা তার ঘরে গিয়েছি। ছেলেটি এখন সুস্থ আছে।
উল্লেখ্য, মাদ্রাসা ছাত্র ফরহাদ হাটহাজারী উপজেলার ফতেহপুর ইউনিয়নের এরশাদ আলী সিকদার বাড়ির মুহাম্মদ জয়নালের ছেলে। অপরদিকে নির্যাতনকারী শিক্ষক হাফেজ মুহাম্মদ ইয়াহিয়া রাঙ্গুনিয়া উপজেলার সরফভাটা ইউনিয়নের তালুবুল্লা সিকদার বাড়ির মো. ইউনুসের ছেলে।