রাশেদুল ইসলাম রাশেদ::গাইবান্ধার বুক চিড়ে বয়ে গেছে তিস্তা-যমুনা ও ব্রহ্মপত্রসহ অসংখ্যা নদ-নদী। এরমধ্যে উজানের পানির ঢল ও ভারী বর্ষণে এসব নদীতে ধীরে ধীরে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর কারণে হঠাৎ পানির ঢেউ আর স্রোত বেড়ে যাওয়াতে বেশ কিছু স্থানে দেখা দিয়েছে ভাঙন। বন্যার আশঙ্কা চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছে নদী তীরে বসবাসকারী পরিবারগুলো।
সম্প্রতি নদ-নদী ভাঙন দেখা যাওয়ায় গাইবান্ধা সদর, ফুলছড়ি, সাঘাটা ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলার নদী ঘেঁষে বাস করা মানুষেরা ভাঙন ও বন্যার শঙ্কায় ভুগছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গাইবান্ধার বিভিন্ন উপজেলায় প্রায় দেড় শতাধিক চর রয়েছে। এসব চরে প্রায় ৫ লাখ মানুষ বসবাস করছেন। প্রত্যেক বছরে বন্যা আর ভাঙনের সঙ্গে লড়াই করে বেঁচে থাকা তাদের। এ বছরেও সেই শঙ্কায় রয়েছেন। যদিও এখনো বন্যা দেখা দেয়নি তবে ধীরে ধীরে পানি বাড়ছে নদীতে। এমনটা অব্যাহত থাকলে অল্পদিনের মধ্যে দেখা দিতে পারে বন্যা। প্লাবিত হতে পারে নিম্নাঞ্চল। যার ফলে বন্যা ও ভাঙন ঝুঁকিতে লক্ষাধিক মানুষের রাত কাটছে নির্ঘুমে। ভাঙনের কবলে তাদের বিলীন হওয়ার সম্ভাবনা ঘরবাড়ি ও কৃষি জমি। এই আশঙ্কায় অনেকে অন্যত্র আশ্রয় নেওয়ারও প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে একাধিক সুত্রে জানা গেছে।
গাইবান্ধা সদরের কুন্দেরপাড়া চরের আজগর আলী বলেন, গত ৪ বছরে নদী ভাঙনের শিকার হয়ে বাপ-দাদার ভিটেমাটি ছেড়ে ঠাঁই হয়েছে পাশের একটি চরে। অর্থাভাবে বসতি জায়গাটুকু উঁচু করতে না পারায় বন্যা ও ভাঙন ঝুঁকিতে থাকতে হচ্ছে।
সুন্দরগঞ্জের তারাপুর এলাকার নজরুল ইসলাম জানান, তিস্তার তীরে তার বসবাস। এরই মধ্যে এই স্থানের একটু দূরে ভাঙন শুরু হয়েছে। এই ভাঙন না ঠেকানো হলে তার বাড়িও নদীগর্ভে বিলীন হওয়া সম্ভাবনা রয়েছে।
সাঘাটা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর কবির বলেন, এ উপজেলার গুয়াবাড়ি, দিঘলকান্দি ও পাতিলবাড়ি এলাকায় গত ৫ বছরে প্রায় ৮ হাজার পরিবার বসতভিটা হারিয়ে বিভিন্ন চরে আশ্রয় নিয়েছেন। চরাঞ্চলের মানুষ যাতে বন্যা ও ভাঙনমুক্ত থাকতে পারে সেজন্য সরকার বন্যা আশ্রয় কেন্দ্র ও ক্লাস্টার ভিলেজ নির্মাণ করেছে।
পানি বিজ্ঞানী ড. আইনুন নিশাত জানান, চরের মানুষের উন্নয়নে প্রয়োজন স্থায়ী পরিকল্পনা। গাইবান্ধার চরগুলোর জন্য পৃথক বোর্ড গঠন করে বন্যা কবলিত মানুষের বিশেষ বরাদ্দ দেওয়া দরকার।
গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী হাফিজুল হক জানান, নদ-নদীগুলোতে পানি বৃদ্ধি পেলেও এখানো বিপৎসীমার নিচে রয়েছে। তবে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হতে পারে। সেই সঙ্গে নদী-নদী ভাঙন ঠেকাতে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক অলিউর রহমান জানান, বন্যা মোকাবিলায় আমাদের পুর্বপ্রস্তুতি রয়েছে। এনিয়ে স্থানীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির অবহিত করা হচ্ছে। সেই সাথে ভাঙনের বিষয়টিও দেখা হচ্ছে।