নোয়াখালীর কোম্পানিগঞ্জের বসুরহাট পৌরসভায় নৌকা প্রতীকে মেয়রপ্রার্থী আবদুল কাদের মির্জা বলেছেন, এ দেশে জামায়াতের যে অবস্থা, তারা আরও ৫০ বছর কোলবালিশ হিসেবে থাকবে। আওয়ামী লীগের কিছু কেন্দ্রীয় নেতার তীব্র সমালোচনাও করেন তিনি। বলেন, তারা সিনিয়র নেতা, আমি তাদের সম্মান করি কিন্তু তারা আমাকে অসম্মান করে বিভিন্ন মিডিয়ায় টকশোতে গিয়ে কথা বলছেন। আমাকে অসম্মান করে কথা বললে আমি কি বসে থাকব?
রোববার (১০ জানুয়ারি) বিকেলে পৌরসভার তিন নম্বর ওয়ার্ডের করালিয়ায় নৌকা প্রতীকে নির্বাচনী পথসভায় অংশ নিয়ে এসব কথা বলেন আবদুল কাদের মির্জা।
তিনি বলেন, আমি সোনার চামচ মুখে দিয়ে জন্মগ্রহণ করিনি। খুব কষ্টে পড়ালেখা করেছি। রাগ করে বাড়ি থেকে বের হয়ে কলেজ হোস্টেলে ছিলাম। অনেক দিন না খেয়ে উপোস ছিলাম। জীবনে কারোর ওপর কোনো অন্যায়-অবিচার করিনি। জীবনে অনেক মামলায় জড়ানো হয়েছে, জেলও খেটেছি।
ভোটারদের উদ্দেশে আবদুল কাদের মির্জা বলেন, ‘ভোটের দিন কেউ পথে ব্যারিকেড দিলে পায়ের জুতা দিয়ে পেটাবেন। অস্ত্র ও বারুদের গন্ধ পাচ্ছি। যে কোনো সময় মেরে ফেলতে পারে। নিজেও অসুস্থ। কেউ কেউ আবার এটি অপ্রচার করে ওবায়দুল কাদের অসুস্থ। আমিও বেশি দিন বাঁচব না।’
তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনার শেষ ভিশন হলো এদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু ভোট করা। এটি তার দ্বারা সম্ভব। কারণ শেখ হাসিনা দুর্নীতিবাজদের এ দেশে বিচার করেছেন। তার দ্বারা সব কিছু করা সম্ভব। তিনি হলেন বঙ্গবন্ধুর কন্যা।’
এর আগে সকালে পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের হাজিপাড়ায় আরও একটি পথসভা করেন আবদুল কাদের মির্জা। সেখানে তিনি ভোটারদের উদ্দেশে বলেন, আমি এ নির্বাচনকে অন্যায়ের প্রতিবাদ হিসেবে নিয়েছি এবং যতদিন বেঁচে থাকব অনিয়ম ও দুর্নীতির কথা বলে যাব।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফের সমালোচনা করে তিনি বলেন, তিনি (হানিফ) বলেন, আমি দায়িত্বজ্ঞানহীন কথা বলেছি। তিনি পাল্টা প্রশ্ন করেন, আপনি দায়িত্ববান হলে আপনার কুষ্টিয়ায় ভাস্কর্য কীভাবে ভাঙা হয় এবং ভাঙার পর আপনি কী করেছেন?
নাম প্রকাশ না করে এই মেয়রপ্রার্থী বলেন, ‘অপর এক নেতা গোপালপুর থেকে এমপি নির্বাচিত। তিনি বলেন, আমি উন্মাদ, পাগল। তিনি যদি ভালো হতেন, তাহলে তাকে কেন মন্ত্রী থেকে বাদ দেয়া হলো। যেখানে শতকরা ৯৯ ভাগ আওয়ামী লীগ, সেখান থেকে এমপি নির্বাচিত হওয়ায় কোনো ব্যাপার নয়।’
‘অপর নেতা নজরুল ইসলাম বাবু টিভি টকশোতে গিয়ে বলেন, নির্বাচনে জেতার জন্য নাকি আমার এসব কৌশল। জামায়াত-বিএনপির ভোট পাওয়ার জন্য এগুলো বলছি। তারপর এখানে নাকি আওয়ামী লীগে কোন্দল। এখানে আওয়ামী লীগ দুই ভাই। সে আমার বয়সে ছোট হবে। আমার রাজনীতির ৪৭ বছর বয়সে আমি কোনো অন্যায়ের সঙ্গে আপস করিনি। আগামীতেও করব না।’
পথসভায় বাম জোটের নেতাদেরও সমালোচনা করেন আবদুল কাদের মির্জা। তিনি বলেন, তারা মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে হয়েও নুরার (নুরুল হক নুর) সঙ্গে রাজপথে গিয়ে কোটাবিরোধী আন্দোলন করে কীভাবে? এদেশে ভোট চুরি করার নিয়ম চালু করে জিয়াউর রহমান। অথচ তাদের দলের নেতারাও এখন ভোট নিয়ে বড় বড় কথা বলে। এটাই হলো আমাদের দেশের রাজনীতি।’
নিজের জীবনের চরম শঙ্কার কথাও বলেন আবদুল কাদের মির্জা। তিনি বলেন, ‘সারাদিন মোবাইল বন্ধ রাখি। রাতে চালু করি। কারণ ষড়যন্ত্রকারীরা কখন কোথায় কী করে, কার ঘরে আগুন দেয়। নেতাকর্মীদের খোঁজখবর নেয়ার জন্য মোবাইল চালু করলেই আমাকে প্রতিনিয়ত মোবাইলে গালমন্দ করা হয়। একজন যুব মহিলা লীগ পরিচয় দিয়ে অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করেছেন। বিষয়টি প্রশাসনকে জানানো হয়ছে। তারা ইচ্ছা করলে মোবাইল ট্র্যাকিং করে ব্যবস্থা নিতে পারত। এখনো কোনো কিছুই করেনি।’
তিনি বলেন, যত বাধা, ভয়ভীতি আসুক না কেন, আমি নোয়াখালী ও ফেনীর অপরাজনীতি, ভোট কারচুপি, মানুষের ন্যায্য অধিকার নিয়ে কথা বলব। লক্ষ্মীপুর নিয়ে আমি কিছু বলব। সেটি আমার কাছ থেকে অনেক দূরে।’
আবদুল কাদের মির্জা আরও বলেন, কিছু নেতার চামচারা বলেন, অমুক নেতার নেতৃত্বে বিএনপির দুর্গ ভাঙা হয়েছে। এটি আসলে ঠিক নয়। ২০০৮ সালে সুষ্ঠু নির্বাচেন বৃহত্তর নোয়াখালীর দুটি আসন পায় আওয়ামী লীগ।
১৯৯৬ ও ২০০৮ সালে দেশে সুষ্ঠু ভোটের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বিগত নির্বাচনে শেখ হাসিনা চেয়েছিলেন ফল কিন্তু প্রশাসনের কিছু অতি উৎসাহী দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা তাকে এনে দিলেন গাছসহ। শেখ হাসিনার মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করা হলেও সেসব দুর্নীতিবাজ ও রাজনৈতিক নেতাদের কারণে তা সম্ভব হচ্ছে না।’
পথসভায় তার দেয়া বক্তব্যগুলো এডিট করে গণমাধ্যমে প্রচারিত হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন আবদুল কাদের মির্জা। তিনি বলেন, সেগুলো স্বার্থবাজ নেতারা শেখ হাসিনার কাছে উপস্থাপন করছেন। আমি যাই বলছি দল ও দলীয় নেতাদের সংশোধন করার জন্য। কারণ সরকারের হাতে এখনো তিন বছর সময় আছে।